অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের দুর্দান্ত ব্যাটিং-এ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো রংপুর রেঞ্জার্স। শুক্রবার সিলেট পর্বের চতুর্থ ও বঙ্গবন্ধু বিপিএল টুর্নামেন্টের ৩২তম ম্যাচে রংপুর ৩৮ রানে হারিয়েছে সিলেট থান্ডারকে। ৩৬ বলে ৬৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ওয়াটসন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৯ রান করে রংপুর। জবাবে ৫ বল বাকী থাকতে ১৬১ রানে অলআউট হয় সিলেট। এই জয়ে ১০ খেলায় ৪ জয় ও ৬ হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে রংপুর। ৯ খেলায় ৮ পয়েন্ট রয়েছে কুমিল্লারও। তবে রান রেটে পিছিয়ে ষষ্ঠস্থানে রংপুর। আর ১০ ম্যাচে মাত্র ১ জয় ও ৯ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে সিলেট।
প্লে-অফের খেলার আশা শেষ হয়ে গেছে সিলেটের। তবে রংপুরের আশা এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু এ ম্যাচে জয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে রংপুরের। এমন ম্যাচে টস জিতে রংপুরকে প্রথমে ব্যাটিং করতে পাঠায় সিলেট। ব্যাট হাতে রংপুরের ইনিংস শুরু করেন মোহাম্মদ নাইম ও অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন। তবে সঠিক সময় ঠিকই জ্বলে উঠেছেন ওয়াটসন। কারন এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তার স্কোর- ৫,১,৭ ও ২।
আজও শুরু থেকে সর্তক ছিলেন ওয়াটসন। তবে শুরুতে দ্রুত রান তোলার কাজটি করেন নাইম। প্রথম দু’ওভারেই ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। তাই ২ ওভারে ২০ রান উঠে রংপুরের। তৃতীয় ওভারে বাউন্ডারি হাঁকান ওয়াটসন। তবে পঞ্চম ওভারে স্পিনার নাইম হাসানের উপর চড়াও হন ওয়াটসন। ওভারের শেষ চার বলে যথাক্রমে – ৬,৬,৪,৪ রান নেন ওয়াটসন।
তাই নাইম-ওয়াটসনের ব্যাটিং ঝড়ে ৮ ওভারে ৭৩ রান পায় রংপুর। কিন্তু নবম ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরেন নাইম। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ বলে ৪২ রান করেন নাইম।
৭৭ রানের উড়ন্ত সূচনার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরন ডেলপোর্টকে নিয়ে রানের চাকা দ্রুত ঘুড়ানোর কাজটা ভালোভাবেই করেন ওয়াটসন। ৩১ বলে নিজের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়াটসন। হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দিয়ে স্পিনার সোহাগ গাজীকে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি। এরপর ১৫তম ওভারে পরপর দু’বলে ডেলপোর্ট-ওয়াটসনকে বিদায় দেন সিলেটের পেসার এবাদত। ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৬৮ রান করেন ওয়াটসন। ১৮ বলে ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন ডেলপোর্ট।
দলীয় ১৩৮ রানে ডেলপোর্ট-ওয়াটসনের বিদায়ের পর দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের লুইস গ্রেগরি-আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী ও ফজলে মাহমুদ। গ্রেগরি ৯ বলে ১৫, নবী ১৭ বলে ২৩ ও ফজলে ৮ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিসমার স্যান্টোকির শেষ ওভার থেকে ২৬ রান তুলেন নবী ও ফজলে। নবী ২টি ও ফজলে ১টি ছক্কা হাকান । ফলে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় রংপুর। এবারের আসরে এটিই রংপুরের সর্বোচ্চ দলীয় রান। সিলেটের এবাদত ৩০ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২০০ রানের বিশাল টার্গেটের জবাব দিতে নেমে প্রথম ৩ ওভারে ২৭ রান তুলে সিলেট। ১২ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৯ রান করে ফিরেন অধিনায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে গিয়েই মারমুখী হন মোহাম্মদ মিঠুন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫ ওভারেই ৪৯ রান পেয়ে যায় সিলেট। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আউট হন আরেক ওপেনার আব্দুল মাজিদ। ৭ রান করেন তিনি।
৫০ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেরফেন রাদারফোর্ডকে নিয়ে ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন মিঠুন। ৪টি চারে ২২ বলে ৩০ রান করে থামেন তিনি। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রাদারফোর্ডই ছিলেন দলের শেষ ভরসা। গতকালই কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ৩১ বলে ৫২ রান করা সোহাগ গাজী আজ ব্যর্থ হন। ১ রানে থামেন তিনি। তবে এক প্রান্ত আগলে লড়াই চালিয়ে যান রাদারফোর্ড। ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে শেষ পর্যন্ত রান আউটে কাটা পড়েন তিনি।
১৭তম ওভারে দলের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে রাদারফোর্ডের আউটের পরই সিলেটের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৬০ রান করেন রাদারফোর্ড। শেষ পর্যন্ত ১৬১ রানে অলআউট হয় সিলেট। রংপুরের মুস্তাফিজুর-তাসকিন-গ্রেগরি ২টি করে উইকেট নেন।