একরাত না ঘুমালেই বিপদ

M_Id_438785_Brain

মাত্র একরাত না ঘুমালেই মস্তিষ্কে থাকা ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ের ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত প্রোটিনগুলো রোগ সৃষ্টির রসদ পেয়ে যায়।

‘নিউরোলজি’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটা দাবি করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, একজন পরিণত বয়স্ক মানুষ যদি একরাত না ঘুমিয়ে কাটায়, তাদের রক্তে যারা রাতে নির্ভেজাল ঘুম দিয়েছেন তাদের তুলনায় উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় ‘টাউ’।

‘টাউ’ হল ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ের ঝুঁকি পরিমাপক ‘বায়োমার্কার’। এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রোটিন পাওয়া যায় মস্তিষ্কের ‘নিউরন’য়ে, যা ‘নিউরন’য়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে এই উপাদান জমে থাকে। রোগের আক্রমণ হওয়ার এক দশক আগ থেকেই সম্ভাব্য রোগীর মস্তিষ্কে এই ‘টাউ’ জমতে শুরু করে।

প্রবীণ অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা এই বিষয়ক আগের গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের অভাবে ‘টাউ’য়ের মাত্রা বাড়ে মস্তিষ্কের ‘সেরেব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড’য়ে।

নতুন গবেষণার প্রধান, সুইডেনের আপসালা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জনাথন সিডারনিস বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, শুধু প্রবীণদের নয়, তরুণ ও স্বাস্থ্যবান মানুষও মাত্র একরাতের ঘুম থেকে বঞ্চিত হলে তাদের রক্তে ‘টাউ’য়ের মাত্রা বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। এই মাত্রা থেকে বোঝা যায় ঘুমের ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তা ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”

এই গবেষণায় অংশ নেন ১৫ জন স্বাস্থ্যবান স্বাভাবিক ওজনের পুরুষ, যাদের গড় বয়স ২২ বছর। গবেষণার শুরুতে তাদের প্রত্যেকেই জানান যে তারা প্রতিরাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমান।

গবেষণা ছিল দুটি ধাপে। প্রতিধাপে অংশগ্রহণকারীদের কড়া বিধি-নিষেধের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ ও খাবার দেওয়া হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা হয় দুই দিন ও দুই রাত ধরে। আর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় সন্ধ্যা ও সকালে।

প্রথমধাপে দুই রাতেই তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে প্রথমদিন অংশগ্রহণকারীদের ঘুমাতে দেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় দিন তাদের ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হয়। ঘুম থেকে বঞ্চিত রাখার সময় তাদের চারপাশে বাতি জ্বালানো ছিল এবং অংশগ্রহণকারীরা বিছানায় বসে ‘গেইমস’ খেলে, সিনেমা দেখে কিংবা গল্প করে সময় কাটিয়েছেন।

রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, মাত্র একরাত না ঘুমানোর কারণে রক্তে ‘টাউ’য়ের মাত্রা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমালে রক্তে ‘টাউ’য়ের মাত্রা বাড়তে দেখা গেছে গড়ে দুই শতাংশ। ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ের আরও চারটি ‘বায়োমার্কার’ পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। তবে ঘুমানো বা জেগে থাকার কারণে সেগুলোর মাত্রায় কোনো পরিবর্তণ দেখা যায়নি।

সিডারনেস বলেন, “মস্তিষ্কে অতিমাত্রায় ‘টাউ’য়ের উপস্থিতি ভালো নয়। আর ঘুম থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে রক্তে ‘টাউ’ বেড়ে যাওয়া কী ক্ষতি ডেকে আনবে তা আমাদের অজানা।

মস্তিষ্কের ‘নিউরন’ সক্রিয় থাকলে ‘টাউ’য়ের উৎপাদন বাড়তে থাকে। ঘুমের ঘাটতির কারণে রক্তে ‘টাউ’য়ের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে মস্তিষ্ক থেকে ‘টাউ’ অপসারিত হয়ে রক্তে এসেছে অথবা মস্তিষ্কে ‘টাউ’য়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।”

Pin It