হাতে ১৪ সেলাই নিয়েও মাঠে নেমে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু অধিনায়কের এমন সাহসিকতাও খুব উজ্জীবিত করতে পারল না ঢাকা প্লাটুনকে। ব্যাটে-বলে গোছানো পারফরম্যান্সে ঢাকাকে সহজে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে ঢাকা প্লাটুনকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম লড়বে ফাইনালে ওঠার শেষ ধাপে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ঢাকা ২০ ওভারে করতে পারে ১৪৪ রান। চট্টগ্রাম জিতেছে ১৪ বল বাকি রেখে।
২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে চট্টগ্রামের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা হয়েছেন রায়াদ এমরিট।
ঢাকার পরাজয়ের বীজ বোনা হয়ে যায় ব্যাটিংয়ের শুরুর ভাগেই। ৬০ রানে হারিয়েছিল তারা ৭ উইকেট। শাদাব খানের দুর্দান্ত ইনিংস তাদেরকে নিয়ে যায় দেড়শর কাছে। কিন্তু সেই রানে লড়াইও জমাতে পারেনি ঢাকা।
ম্যাচের শুরুর দিকে অন্যতম আলোচিত নাম অবশ্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। শনিবারের ম্যাচে চোট পেয়ে ১৪ সেলাই পড়েছিল তার বাঁহাতে। সেই হাত ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে মাশরাফি নেমে গেছেন ঢাকাকে নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু দলকে ডোবান তাদের ব্যাটসম্যানরা।
ঢাকার দুর্যোগের শুরু সবচেয়ে বড় ভরসা তামিম ইকবালের বিদায় দিয়ে। যথারীতি শুরু করেছিলেন তিনি মন্থরতায়। কিন্তু আউট হয়েছেন রুবেলকে বেরিয়ে এসে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে। ১০ বলে বাঁহাতি ওপেনার করেন ৩ রান।
বাজে শটের সেই ধারা ছড়িয়ে গেল যেন ঢাকার অন্যদের মধ্যেও। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে তুলে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে এলেন এনামুল হক। দলে ফেরা লুইস রিস সুযোগ হেলায় হারালেন মাহমুদউল্লাহকে উইকেট উপহার দিয়ে।
এই দুজনই করতে পারেননি রান। ১১ বার শূন্য রানে আউট হয়ে এনামুল গড়েছেন বিপিএল রেকর্ড।
এক পাশে মুমিনুল খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লে শেষে ঢাকার রান ৩ উইকেটে কেবল ২৮! তাতে মুমিনুলেরই ছিল ১৭ বলে ২০।
পাঁচে নেমে মেহেদি হাসান সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান শুরুতেই। কিন্তু এবারের বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করা অলরাউন্ডার এদিন কাজে লাগাতে পারেননি জীবন। সীমানায় ক্যাচ দেন এমরিটের স্লোয়ার বাউন্সারে। এমরিটের পরের বলেই নুরুল হাসান সোহানের দারুণ ক্যাচে ফিরেন জাকের আলি।
এমরিট-সোহান জুটির সমন্বয়ে কাটা পড়েন ঢাকার ভরসা হয়ে থাকা মুমিনুলও। উইকেটের পেছনে আরেকটি ভালো ক্যাচ নেন সোহান, মুমিনুল থামেন ৩১ বলে ৩১ করে।
এরপর নাসুমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে যখন ফেরেন আসিফ আহমেদ, ত্রয়োদশ ওভারে ঢাকার রান তখন ৭ উইকেটে ৬০।
ঢাকার ঘুরে দাঁড়ানোর পর্ব শুরু এরপরই। থিসারা পেরেরাকে নিয়ে ৩০ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন শাদাব। ১৩ বলে ২৫ রানের ক্যামিও খেলে আউট হন থিসারা।
শাদাব শেষ দিকে চালান তাণ্ডব। নবম উইকেট জুটিতে মাশরাফি ২ বল খেলে রান করেননি কোনো, শাদাব করেন ১৩ বলে ৩৮!
পাকিস্তানের এই লেগ স্পিনারের সৌজন্যেই শেষ ৩ ওভারে ৫১ রান তোলে ঢাকা। জিয়াউর রহমানের করা শেষ ওভার থেকে আসে ২৩ রান।
নিজের খরচ করা রান জিয়া অনেকটা পুষিয়ে দেন ব্যাটিংয়ে। ওপেনিংয়ে তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই উড়ন্ত সূচনা পায় চট্টগ্রাম। মেহেদির অফ স্পিনে দুটি ছক্কা মারলেও ক্রিস গেইল বাকি সময়টায় ছিলেন সাবধানী। মূলত জিয়ার সৌজন্যেই ৫ ওভারে ৪১ তুলে ফেলে দল।
১২ বলে ২৫ করে আউট হন জিয়া। তিনে নেমে আক্রমণের সেই ধারা ধরে রাখেন ইমরুল কায়েস। চট্টগ্রাম এগোতে থাকে অনায়াসে।
মাশরাফির স্পেলের শেষ দুই বলে দুটি ছক্কায় ইমরুল রাখেন দাপটের ছাপ। থিসারা পেরেরাকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় সহজ করে দেন রান রেটের হিসাব।
দুই বাঁহাতি দেখে হয়তো লেগ স্পিনার শাদাব খানকে আক্রমণে আনছিলেন না মাশরাফি। সেই শাদাবই পরে ভাঙেন জুটি। নিজের প্রথম ওভারে ফেরান ২২ বলে ৩২ রান করা ইমরুলকে।
শাদাব পরে আউট করেন গেইলকেও। ৪৯ বলে ৩৮ করে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান আউট হন মাশরাফির এক হাতের ক্যাচে। তবে চট্টগ্রামের জিততে সমস্যা হয়নি। দুর্দান্ত ঝড়ো ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
টানা দুই ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ৪ ছক্কায় চট্টগ্রাম অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ৩৪ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (তামিম ৩, মুমিনুল ৩১, এনামুল ০, রিস ০, মেহেদি ৭, জাকের ০, শাদাব ৬৪*, আসিফ ৫, থিসারা ২৫, মাশরাফি ০*; রুবেল ৪-০-৩৩-২, মেহেদি রানা ৪-০-২৫-০, নাসুম ২-০-১১-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৫-১, এমরিট ৪-০-২৩-৩, জিয়াউর ৪-০-৩৯-০)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৭.৪ ওভারে ১৪৭/৩ (গেইল ৩৮, জিয়া ২৫, ইমরুল ৩২, মাহমুদউল্লাহ ৩৪*, ওয়ালটন ১২*; মাশরাফি ৪-০-৩৩-০, মেহেদি ৪-০-২০-১, হাসান ৪-০-৩৫-০, রিস ২-০-১০-০, থিসারা ১-০-১৪-০, শাদাব ২.৪-০-৩২-২)।
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রায়াদ এমরিট