রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশে অবস্থানকারী নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠী। জাতিগত নিধনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মনে করছেন, আইসিজের রায় তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পথকে সুগম করবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার ঐতিহাসিক মামলায় ২৩ জানুয়ারি আদেশ দেবে আইসিজে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ভাইস চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুর রহিম বলেন, ‘আশা করছি আমরা গণহত্যার বিচার পাব। এর ফলে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে, আমাদের নিজ দেশে ফেরাও ত্বরান্বিত হবে।’
টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবির রোহিঙ্গা নেতা নুর বশর বলেন, গাম্বিয়া আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে রোহিঙ্গাদের যে উপকার করেছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ২৩ জানুয়ারির রায়ের পর হয়তো আমাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার একটি পথ বের হবে।’ তিনি বলেন, আইসিজের শুনানিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির গণহত্যার কথা অস্বীকার প্রমাণ করে তিনি একজন মিথ্যাবাদী। কারণ রোহিঙ্গারা যে গণহত্যার শিকার তা প্রমাণিত সত্য।
গত মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালতে এ মামলায় শুনানি হয়। ১৫ সদস্যের আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রায় দেবেন। সেখানে প্রথমবারের মতো স ুচির সামনেই রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা। এ সময় সু চিকে ভাবলেশহীন দেখা যায়।
সত্তর বছরের রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার ফুফাতো ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে; তার আপন দুই ভাই এখনও রাখাইনে বন্দি। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে আমরা যে অত্যাচারের শিকার হয়েছি, আশা করছি এ রায়ে তার বিচার মিলবে।’
ইমান হোসেন নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর জানায়, হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে তার এক ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার বাবা-মাকেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। সে জানে না তারা এখন বেঁচে আছে কিনা। তার আশা, আইসিজের রায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে আসবে। স্বজন হারানোর বেদনা একটু হলেও কমবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালায় মিয়ানমার। সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা হত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে নতুন করে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে গণহত্য আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত যাতে আরও তীব্রতর না হয় এ জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
মিয়ানমারে এখনও ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে সোয়া লাখের মতো আছে বন্দিশিবিরে। বাকিদেরও দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। গাম্বিয়া মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদন করেছে আইসিজেতে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুবুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমরাও আশাবাদী। নিশ্চয়ই আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি পথ বের হয়ে আসবে।’