চাকরিতে অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডে কোটা থাকবে না

PMO-9-samakal-সমকাল-5e25d7b52dfb0

সরকারি চাকরিতে নন-ক্যাডার অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর আগে ‘নন-ক্যাডার অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি স্পষ্টকরণের লক্ষ্যে পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব’ তোলা হয় মন্ত্রিসভায়। এ ছাড়া সভায় আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০২০-এর খসড়া, আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন-২০১৯-এর খসড়া, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৯-এর খসড়া, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৯-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের পাশাপাশি ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ উদযাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩ম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩ম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে, নাকি আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, তা স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছিল। কোটা বাতিলের পরিপত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগে কোটা না রাখার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও অষ্টম থেকে প্রথম গ্রেডের নিয়োগে কোটার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না।

আগের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটি ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশ জমা দেন। কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সে প্রস্তাবটিই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আকাশপথে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রায় সোয়া কোটি : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০১৯-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন কার্যকর হলে আকাশপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আঘাত এবং লাগেজ হারিয়ে গেলে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়বে। বিমান দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বর্তমানে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। নতুন খসড়ায় আইনে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এ আইনের বিধানাবলি অনুসারে ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। সংশ্নিষ্ট উড়োজাহাজের পক্ষে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অথবা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।

তিনি বলেন, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে বিলম্ব, ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যু ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ আইন প্রয়োগ হবে। এক্ষেত্রে সরকার বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে এ আইনের বিধানগুলো প্রয়োগযোগ্য করতে পারবে। মন্ট্রিল কনভেনশনের আলোকে প্রণীত প্রটোকল সংশোধনীগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এ আইন দ্বারা প্রয়োগ করা যাবে।

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি আইন : নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানা দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি নবায়নের সুযোগ ও শাখা খোলার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৯’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। প্রণীত আইনটিতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় ট্রাভেল এজেন্সির সেবা প্রদান ও বিদ্যমান আইনের বিধানগুলো বাস্তবায়নকালে ক্ষেত্রবিশেষে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদ নবায়নের আবেদন করতে না পারলে ওই এজেন্সির নবায়নের আর সুযোগ থাকে না। মালিকানা হস্তান্তরের বিধান নেই। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অর্থদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা না থাকায় সামান্য অপরাধের জন্য এজেন্সির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করতে হচ্ছে। এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সির শাখা খোলার বিধান নেই।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত আইনে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৯৮’-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

Pin It