রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জুমার নামাজে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার জন্য দোয়া

pic,,-samakal-সমকাল-5e2b0ac25ad7b

আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) যুগান্তকারী আদেশে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করায় সন্তুষ্ট নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠী। এটিকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় বলে মনে করছেন তারা। এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ মোনাজাতে গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের জন্য দোয়া করা হয়। আইসিজেতে মামলাটি করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আর তাতে সহায়তা দেয় বাংলাদেশ।

মিয়ানমার সরকার কখনোই রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে না। রোহিঙ্গারা কয়েক শতাব্দি দেশটিতে বসবাস করলেও দেশটির সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদেরকে ‘বাঙালি’ বলে মনে করেন। এজন্য তাদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের দাবির সঙ্গে একমত নয়।

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালত আদেশে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। এতে তারা খুবই খুশি। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়।

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সৈয়দ উল্লাহ বলেন, মিয়ানার সরকার রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় মেনে নিতে কোনভাবেই রাজি নয়। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি আন্তর্জাতিক আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানেও রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ করেনি। কিন্তু আদালত আদেশে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটি আমাদের জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃত।

এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আদালত গাম্বিয়ার সাতটি দাবির মধ্যে চারটি আমলে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে সু চির যুক্তি খারিজ করা হয়েছে। রায়ে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করেছে সেখানে গণহত্যা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আদালতের চূড়ান্ত রায়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার হবে।

কুতুপালং ৩ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. আয়াছ বলেন, আইসিজের রায়ে রোহিঙ্গারা অনেক খুশি। দীর্ঘ কয়েক যুগের রোহিঙ্গা আন্দোলনে যে দাবি আদায় হয়নি, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে সেই দাবির কিছুটা হলেও স্বীকৃত হয়েছে। এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আইসিজের আদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আসেনি। এরপরও আদালতের এ আদেশ রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের প্রধান থুন কিং বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের এ আদেশে মিয়ানমারের উপর আরো বেশি চাপ পড়বে। কেননা, এই মামলার শুনানীতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি নিজে অংশ নিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার ঘটনাগুলো এড়িয়ে গিয়ে সরকারি বাহিনীকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের প্রাথমিক আদেশে গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এখন চুড়ান্ত রায়ে মিয়ানমারের উপর সাজা আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ঘুমধুম শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, আইসিজের প্রাথমিক আদেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রথম বিজয়। যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, এর কোনও বিচার পায়নি। এই আদেশে প্রথম বিচারের স্বাদ পেয়েছি।

এদিকে শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন ক্যাম্পে জুমার নামাজের পর বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এই সময়ে বিভিন্ন মসজিদে ইমামগণ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন এবং আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। ইমামরা বাংলাদেশ এবং গাম্বিয়ার জন্যও বিশেষ ভাবে দোয়া করেন। মোনাজাতে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গারা কান্নাকাটি করে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল ফরিয়াদ জানায়।

বাংলাদেশ ও গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহামদ আলম বলেন, আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের স্বপ্ন বাস্টত্মবায়নের প্রথম ধাপ পূর্ণ হলো। এই রায়ে শুকরিয়া জানিয়ে তার শিবিরের মসজিদে-মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়েছে। এতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয় যেন আরাকানের রোহিঙ্গা ও স্বজনদের হত্যার সুবিচার মেলে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার সরকার ও জনগণের জন্য দোয়া করা হয়।

রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, কোন কর্মসূচি পালনে অনুমতি না পাওয়ায় শিবিরের সব মসজিদ ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়েছে। দোয়াতে গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞা জানানো হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।

Pin It