বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ইতালি।
বুধবার রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত আসে।
দুই সরকার প্রধানের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও গুরুত্ব পায় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকে অংশ নিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে উপস্থিত হলে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকের পর দুই সরকারপ্রধান এক সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন।
ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক রয়েছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আরও জোরদারের উপর গুরুত্ব দেন।
দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়াতে শেখ হাসিনা কিছু প্রস্তাব তুলে ধরলে ইতালির প্রধানমন্ত্রী সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ইতালি বাংলাদেশের অত্যন্ত ভালো বন্ধু। স্বাধীনতার পর পরই যেসব দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইতালি তাদের অন্যতম।
“আমি বিশ্বাস করি আজকের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চিত্র কন্তের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য ইতালিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা সুবিধা চালু করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে ইতালির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বিনিয়োগবান্ধব নীতি বাংলাদেশে রয়েছে। এই সুবিধাগুলো নিতে ইতালির কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যও ইতালি আমদানি করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতালিতে যেসব বাংলাদেশি কাজ করেন, তারা দুই দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইতালিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের কাজের প্রশংসা করেন কন্তেও।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘ আদালতের নির্দেশনা কার্যকরের জন্য মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে ইতালিকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জুসেপ্পে কন্তে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনার মানবিক আচরণের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে ১০ লাখ ইউরো সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা ইতালির প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
“অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের সরকার হলি আর্টিজান হামলা প্রতিরোধ করেছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশের জনমত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।”
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে নিহত ইতালির নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান কন্তে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার কথা জানিয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ইতালি কূটনীতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপন করবে।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতায় আগ্রহ প্রকাশ করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।