বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনের একাংশ।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতিতে সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের এই নেতারা প্রতিষ্ঠাতাকালীন মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগও করেন।
তবে এসব বিষয়ে গোবিন্দ চন্দ্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হিন্দু জোটের যুগ্ম মহাসচিব উত্তম কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, গোবিন্দ প্রামাণিক বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি করায় তারা বিব্রত’।
“তিনি সর্বদা জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রশংসা করেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কথা বলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও নানা সময়ে কটূক্তি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছে।
“এছাড়াও সম্প্রতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ এমন উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগও রয়েছে। আমাদের নানা কর্মসূচিতেও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির লোকজন এসে উপস্থিত হতেন। নেতাকর্মীরা নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন।”
সংগঠনের মাসিক চাঁদার পরিমাণ, আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশে গোবিন্দ প্রামাণিক নানা সময়ে ‘অস্বীকৃতি’ জানাতেন বলে অভিযোগ করেন হিন্দু মহাজোট নেতারা।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়া সদস্যপদ প্রদান, পদায়ন এবং জেলা-উপজেলার কার্যকরী কমিটি ‘ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ায়’ গোবিন্দ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ অন্য নেতারা।
ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি -এনআরসি, রাম মন্দির ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি করায় গোবিন্দ প্রামাণিক ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন’ বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
উত্তম কুমার দাস বলেন, “এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন মাত্র ব্যক্তির একগুয়েমি, স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যবসায়ী মনোভাব, ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক চিন্তার কারণে আজ পর্যন্ত এই সংগঠনটি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি। মাত্র একজন নেতার স্বেচ্ছাচারিতা, নৈতিক স্খলন ও এক কর্মীর বিরুদ্ধে অন্য একজনকে লাগিয়ে দেওয়া, অর্থ নিয়ে পদায়ন করা ইত্যাদি কারণে সংগঠনটি বারবার ভাঙনের মুখে পড়েছে।
“এসবের পেছনে মাত্র একজন লোকই বরাবর দায়ী ছিল, এখনও আছেন। তিনি হলেন গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, যিনি প্রতিষ্ঠাতাকালীন সময় থেকে এ বছরের ১৬ জানুয়ারি অবধি সংগঠনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।”
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের ‘ব্যর্থ নেতৃত্বের’ কারণে ২০১৫-১৬ সময়কালে হিন্দু মহাজোটে ভাঙন দেখা দিলে সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে বলে জানান উত্তম। তখন জয়ন্ত কুমার সেন সভাপতির পদ ছেড়ে যান।
উত্তম দাস বলেন, “বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে কাজ করছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক সরাসরি যুক্ত বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। ফলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা নানা ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে ও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। যদিও এ সংগঠন কারও তাবেদারি করবে না, এমন প্রতিশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে গোবিন্দ প্রামাণিককে ডেকে আনা হয় জানিয়ে উত্তম বলেন, সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ‘জবাব দিতে পারেননি’।
এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হিন্দু মহাজোট নেতা তারক পদ রায়, বিমল কৃষ্ণ শীল, রাম কৃষ্ণ বিশ্বাস, হেমন্ত কুমার দাসকে নিয়ে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা (বিগ্রেডিয়ার জেনারেল) জয়ন্ত কুমার সেন সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা চাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে সোনালী দাসকে।
গোবিন্দ প্রামাণিকের স্থলে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়কে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোবিন্দ প্রামাণিকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জয়ন্ত কুমার সেন বলেন, “নানা অনিয়ম অভিযোগের কারণে আমি দুই বছর আগে সংগঠনটি থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এখন এই সংগঠনের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।”