বিশ্বচ্যাম্পিয়ন !
বছরের পর বছর ক্রিকেট খেলে গেলেও এই একটা গৌরব কখনোই অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় বা এশীয় পর্যায়ের ফাইনালই যেখানে ‘জুজু’র মতো তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, সেখানে ‘বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন’ ছিল দূর অস্ত! তবে তারুণ্যের নিশান উড়িয়ে আরাধ্যের সেই স্বপ্নপূরণের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা নামছেন যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে; প্রতিপক্ষ যেখানে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। ইতিবাচক আগামীর স্বপ্ন দেখানো যুবারা সুদূর আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলতে পারবেন? উত্তরের জন্য অপেক্ষা বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া খেলায়।
জাতীয় বা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কোনো দল আইসিসি আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে এই প্রথম। তুলনায় ভারত এই মঞ্চে বেশ পুরোনো। টুর্নামেন্টের আগের ১২ আসরের ছয়টিতেই ফাইনাল খেলেছে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারটিতে। যার শেষটি ২০১৮ সালে। বিপরীতে বাংলাদেশের এর আগে সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০১৬-তে সেমিফাইনাল খেলা। আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান দল তাই ফাইনালে ওঠার মাধ্যমেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। আজ কেবল পূর্ণতা দেওয়ার পালা।
সাম্প্রতিক অতীত বিবেচনায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য প্রতিশোধের মঞ্চও। গত বছরে ভারতের কাছে দুটি ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ। একটি শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে, আরেকটি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। এর আগের বছর এশিয়া কাপের সেমিতেও প্রতিবেশী দেশটির কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুই এশিয়া কাপের হারে ছিল জাতীয় দল পর্যায়ের নিদাহাস ট্রফি ও ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের হারের মিলও; প্রথমটিতে ২ রানে, পরেরটিতে ৫ রানে। তবে ভারতের বিপক্ষে শেষে গিয়ে তরী ডোবার এই স্মৃতি নয়, আকবররা রোমন্থন করতে চান দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ফাইনালে ওঠার পথচলা।
জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করা, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে একপ্রকার উড়িয়ে (১০৪ রানে জয়) দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সেমি। ধারা ধরে রেখে সেমিতে নিউজিল্যান্ডকে ২১১ রানে আটকে অভিজ্ঞতার স্ম্ফুরণে ৬ উইকেটে ফাইনাল নিশ্চিতকরণ। ফাইনালে ওঠার পথে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরি, কোয়ার্টারে তানজিম হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয় ও শাহাদাত হোসেনের ফিফটি, টুর্নামেন্টজুড়ে বাঁহাতি স্পিনে রাকিবুল হাসানের হ্যাটট্রিক ও ইনিংসে ৫ উইকেটের মতো সাফল্য, বাঁহাতি পেসে শরীফুল ইসলাম ও তানজিদ হাসান সাকিবের নিয়মিত ব্রেক থ্রু আর সর্বোপরি ধারাবাহিক উজ্জীবিত ফিল্ডিং মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন ট্রফি হাতে তোলার মঞ্চে।
কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে পরিচর্যা হওয়া ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলও অবশ্য সামর্থ্যে-দক্ষতায় যে কারও জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। কোয়ার্টারে অস্ট্রেলিয়াকে ৭৪ রানে আর সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে দলটি। প্রিয়াম গার্গের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল বোলিংয়ে বেশ এগিয়ে; ব্যাটিংয়ে আছে যশস্বী জয়সওয়ালের মতো দৃষ্টিকাড়া খেলোয়াড়। গত যুব বিশ্বকাপের পর থেকে সবচেয়ে বেশি জয় পাওয়া দলটিকে সব দিক থেকেই ব্যালান্সড বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন ইয়ান বিশপ, টম মুডির মতো ক্রিকেট বিশ্নেষক-কোচরা।
তবে এক্ষেত্রে খুব পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। শেষ দুই বছরে কমপক্ষে ১৫টি যুব ওয়ানডে খেলা দলগুলোর মধ্যে ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় পাওয়া দলটিই হচ্ছে জুনিয়র টাইগাররা। এ সময়ে ৩৩টি ওয়ানডে খেলে ১৮টিতে জিতেছেন আকবর-তামিম-তৌহিদ-শামিম-শরীফুলরা। যেটুকু ব্যর্থতা, তা ওই ভারতের কাছে ফাইনাল হেরে যাওয়া।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই হারের বদলাই না হয় নিক বাংলাদেশের যুবারা।