গ্রামীণফোন জানিয়েছে, বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০০০ কোটি টাকা তারা রোববার পরিশোধ করবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের একদিন পর শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানালো দেশের শীর্ষ এই মোবাইল ফোন অপারেটর।
আপিল বিভাগ গত ২৪ নভেম্বর গ্রামীণ ফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশেধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেজন্য তাদের দেওয়া হয়েছিল তিন মাস সময়, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার আগেই গত মাসে সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল গ্রামীণফোন।
এ বিষয়ে শুনানি করে আপিল বিভাগ বুধবার বলেছে, ২০০০ কোটি টাকা গ্রামীণফোনকে দিতেই হবে। তার মধ্যে ১০০০ কোটি টাকা সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে সোমবার পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
আদালতের ওই আদেশের পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমার যতটুকু মনে হয় টাকাটা তারা দিয়ে দেবে, যদি না দেয় আইন যেসব ক্ষমতা বিটিআরসিকে দিয়েছে… বিটিআরসি কখনও কোনো বেআইনি কাজ করে না, করবেও না।”
এরপর টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শুক্রবার গ্রামীণফোনের বিবৃতিতে বলা হয়, বিচার ব্যবস্থার ওপর তাদের শ্রদ্ধা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কোম্পানি হিসেবে গ্রামীণফোন ও এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর ‘যে চাপ’ দিয়ে আসছে, সে বিষয়েও আদালত সুরক্ষা দেবে বলে তার আশা করছে।
বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।
এই টাকা আদায়ে প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২২ জুলাই বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। তাতেও কাজ না হওয়ায় গতবছর ৫ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রয়োজনে গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগের কথাও বলেন।
বিটিআরসির এসব পদক্ষেপের ফলে গ্রাহকসেবায় বিরূপ প্রভাব করার কথা জানিয়ে গ্রামীণফোনের বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলে সামগ্রিক ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“গ্রামীণফোন এখনও বলতে চায়, অডিট আপত্তি নিয়ে বিটিআরসির ওই দাবি সঠিক নয়। গ্রামীণফোন আশা করে, তাদের বক্তব্যও আদালত শুনবে। গ্রাহক, সহযোগী ও অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষা করতে, সমঝোতার ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ সমাধানে পৌঁছাতে গ্রামীণফোন আলোচনা চালিয়ে যাবে।”
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা পরিশোধের পর গ্রামীণফোনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘বাধাগুলোও’ দূর হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে বিবৃতিতে।
বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় গ্রামীণফোন গতবছর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।
গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণ ফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়।
ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ২৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন (রিভিউ) করে গ্রামীণফোন, যার ওপর শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় আদালত।





