করোনা ভাইরাস অর্ধশতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশে সংক্রমণ এড়াতে এসব দেশ থেকে কেউ কোনো উপসর্গ না নিয়ে দেশে ফিরলেও ১৪ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রবিবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই পরামর্শ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এখন পর্যন্ত ৫৪ দেশে কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে কারো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তাই সেসব দেশে এ রোগ ধরা পড়েনি সেখান থেকে ফিরলেও তারা যেন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের না হন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে কারো মধ্যে এই রোগের জীবাণু পাওয়া না গেলেও সতর্ক থাকার ওপর জোর দিচ্ছে আইডিসিআর; কেননা যেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, সেখানে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। ডা. ফ্লোরা আরো বলেন, ‘এ জন্য আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি, যারা বাইরে থেকে আসবেন, তারা বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সম্ভব হলে গণপরিবহনে না গিয়ে নিজস্ব যানবাহনে যাবেন, এ সময় পরিবহনের জানালা খোলা রাখবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছি, আপনারা আবশ্যিকভাবে বাড়িতে অবস্থান করুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যদি বাইরে যাওয়া খুবই দরকার হয়, তাহলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।’
আক্রান্ত হয়ে কেউ এলে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমেই তাকে শনাক্ত করে চিকিত্সা দেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক। বিদেশ থেকে আসা কারো মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যেসব দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, সে সব দেশ ভ্রমণ এড়াতে বাংলাদেশিদের পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ না ঘটলেও সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি এবং আরব আমিরাতে এক জন বাংলাদেশি কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. ফ্লোরা জানান, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি থাকা পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। আরো দুই জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে, করোনা ভাইরাসটিতে মৃত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের নাগরিক। চীনে নতুন করে আরো ৫৭৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আগের দিনের ৪২৭ জনের তুলনায় এ দিন নতুন আক্রান্তে সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পায়। গত এক সপ্তাহে এক দিনে নতুন আক্রান্তের এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা বলে রবিবার জানিয়েছে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ দিন নতুন আক্রান্তের ঘটনা মূলত উহানেই সীমাবদ্ধ ছিল। চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃতের সংখ্যা এখন ২ হাজার ৮৭০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে। কভিড-১৯ রোগে ভুগে চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চীনসহ বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে চীনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৯ হাজার ৮২৪ জনে দাঁড়িয়েছে আর চীনের বাইরে আক্রান্তে সংখ্যা ৬ হাজার ৬৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছে সিএনএন। চীনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, মূল ভূখণ্ডে আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ হাজার ৬২৫ জন রোগী সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। এ সংখ্যাটি মোট আক্রান্তের ৫২ শতাংশ। তবে সুস্থ বলে ছাড়পত্র পাওয়া লোকজনও ফের আক্রান্ত হতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। এখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৩৭৬ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫২৬ জন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ইতালি ও ইরান, প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর নতুন উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১২৮ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এখানে আক্রান্তদের ১০ শতাংশ চিকিত্সা কর্মী। ইতালি থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯৩ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে ইরানেই কভিড-১৯ রোগে সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। এখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১০টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম এক জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে ফিরিয়ে আনা ৭৮ বছর বয়সি এ ব্যক্তি পার্থের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
এদিকে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে দশটিরও বেশি দেশের লাখ লাখ শিশুর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে আছে।