খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ‘বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের’ মধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
মাটিরাঙ্গা থানার ওসি শামসুদ্দিন ভূঁইয়া জানান, মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার গাজীনগর এলাকায় সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- গাজীনগর গ্রামের মুসা মিয়া (৬০), তার দুই ছেলে আহম্মদ আলী (২৫) ও আলী আকবর (২৭), আকবরের শ্বশুর মফিজ মিয়া (৫০) এবং বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের জওয়ান মো. শাওন (৩০)।
এছাড়া পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর খবর শোনার পর মুসার স্ত্রী রনছু বেগম (৫০) আকস্মিকভাবে মারা যান বলে মুসা মিয়ার ছোট ভাই ইব্রাহিম মিয়া দাবি করেন। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওই গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম জানান, মুসা মিয়া নিজের বাগান থেকে কিছু গাছ কেটে ট্রলিতে করে স মিলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৪০ বিজিবির একটি টহল দল তাদের আটকে দেয় এবং কাঠগুলো জব্দ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
“এ সময় মুসা মিয়ারা আপত্তি তোলেন। এ নিয়ে কথা কাটা কাটি শুরু হয়। বিজিবি তখন গুলি ছোড়ে।”
ওসি শামসুদ্দিন বলেন, “বিজিবির গুলিতে মুসাসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। সংঘর্ষের মধ্যে বিজিবি সদস্য শাওনও নিহত হন।”
তবে কীভাবে ওই বিজিবি জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি ওসি।
তিনি জানান, মফিজ মিয়া ও মো. হানিফ (২৮) নামে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সন্ধ্যায় মফিজের মৃত্যুর খবর পান তারা।
ওই গ্রামের কৃষি শ্রমিক মো. ফারুক দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি ২০ থেকে ২৫ গজ দূরে ছিলেন এবং গুলির ঘটনাটি তিনি দেখেছেন।
“কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে একজন বিজিবি সদস্য গুলি ছোড়ে। অন্য বিজিবি সদস্যরা তখন তাকে থামানোর চেষ্টা করে। ওই বিজিবি সদস্য তখন অন্যদের দিকেও গুলি করে।”
বিজিবির গুলিতেই ওই বিজিবি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে- গ্রামবাসীর এমন দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ৪০ বিজিবির অধিনায়ক সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, এ বিষয়ে তারা পরে কথা বলবেন।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিবি সদস্যরা ‘অবৈধ কাঠ পাচার’ ঠেকাতে গেলে ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আর স্থানীয় লোকজন বিজিবির অস্ত্র ‘ছিনিয়ে নিয়ে গুলিবর্ষণ’ করলে চারজনের মৃত্যু হয়।
“মঙ্গলবার আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগর বাজার হতে ১০০ গজ দক্ষিণে বিজিবির একটি টহল দল অবৈধ কাঠ পাচাররোধে ব্যবস্থা নিলে বেসামরিক স্থানীয় লোকজন বিজিবি টহল দলকে ঘিরে ধরে।
“এতে বিজিবির টহল দল ও বেসামরিক জনগণের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বিজিবির এক রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার ও ধাক্কাধাক্কির রেশ ধরে এক পর্যায়ে বেসামরিক লোকজন বিজিবির অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গুলি বর্ষণ করে। আলোচ্য ঘটনায় বিজিবির সিপাহী শাওন ও ৫ জন বেসামরিক জনগণের গায়ে গুলি লাগে। ফলশ্রুতিতে বিজিবি সদস্য শাওন ও বেসামরিক ৪ জন মৃত্যুবরণ করে।”
এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সামগ্রিক ঘটনাটি তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহরিয়ার জামান এলাকাবাসীকে বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কারা কীভাবে এ ঘটনায় জড়িত, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক প্রতাপচন্দ্র বিশ্বাস জানান।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাউদ্দিন ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।