ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর চড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম আমদানি ও দেশীয় উৎপাদনে ভর করে এক সময় কিছুটা কমলেও তা শতকের নিচে নামছিল না, পাঁচ মাসের মাথায় ভারত আবার যখন রপ্তানি শুরুর ঘোষণা দিল তার পরপরই বাংলাদেশের বাজারে পড়ল দাম।
ঢাকার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে, খুচরায়ও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
শুক্রবার ঢাকার নিউ মার্কেটের মুদি দোকান নোয়াখালী এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, “সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছে। ১৫ দিন আগে পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি ১২৩ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছিলাম। বাজার পড়তে থাকায় এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। রসুনের দামও প্রতি কেজি ১৮০ টাকা থেকে কমে ১৬০ টাকায় এসেছে।”
নিউ মার্কেটের আরেক মুদি দোকান শরীফ এন্টারপ্রাইজের শরীফ বলেন, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা করে কমেছে।”
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে এই পণ্যের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। এই নিত্যপণ্যের দাম প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকায় উঠে যায়।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার চীন, তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে আমদানি করে বাজার সামলানোর চেষ্টা চালালেও পেঁয়াজের দর একশ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল।
এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ভারত আবার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের বাজারে হঠাৎ দাম কমে আসে। গেল সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে এতদিনের ১০০-১১০ টাকার পণ্য ৬০ টাকায় পেয়ে বিস্মিত হন অনেককে। শুক্রবার মগবাজারের পেয়ারাবাগের মুদি দোকানে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। ৫০-৬০ টাকায় পেঁয়াজ পাওয়া গেছে রায়েরবাজারেও।
তবে রাজধানীর হাতিরপুল কাচাবাজারের মুদি দোকানি আমান হোসেন বলেন, “পাইকারি বাজারের দামের সঙ্গে পত্রপত্রিকার কথার কোনো মিল পাচ্ছি না। পত্রিকায় দাম লেখে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা, ৪০ টাকা হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কিনতে গেলে তো আর পাচ্ছি না।
“কারওয়ানবাজার থেকে ৭০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। তাই ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। হল্যান্ডের পেঁয়াজ ৫০ টাকা করে কেনা ৬০ টাকা করে বিক্রি। দেশে উৎপাদিত নতুন রসুন ১০০ টাকা করে কেজি, আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকা করে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। “
তিনি ওই কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যে কারওয়ানবাজারে গিয়ে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই বাজারে প্রতি ৫০ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬০ টাকা।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা সেকান্দার জানান, দুদিন আগে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। কেবল শুক্রবারেই দাম কিছুটা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে হল্যান্ড, পাকিস্তানসহ আমদানি করা পেঁয়াজও দেশি পেঁয়াজের মতো ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
রাজধানীর শ্যামবাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা হাজি ইদরিস আলি মধু বলেন, “দীর্ঘদিন পর দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে। মান ভেদে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রচুর পেঁয়াজ বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন দাম আরও কমে যাবে।”
টিসিবির তথ্য বলছে, পেঁয়াজের দাম কমলেও এখনও তা এক বছর আগের দামের চেয়ে দ্বিগুণ।
এদিকে বাজারে রসুনের দামও কমতির দিকে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। শুক্রবার কারওয়ানবাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
“মাঝখানে করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাতে রসুনের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ২০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। এখন বাজারে দেশি রসুন আসতে শুরু করায় আমদানি করা রসুনের ওপর চাপ কমেছে,” বলেছেন নিউ মার্কেটের মুদি দোকানি শরীফ।
বর্ষার সবজি আসছে
বাজারে শীতকালীন শাক-সবজির সঙ্গে নতুন করে বর্ষাকালীন সবজিও আসতে শুরু করেছে। শীতের সবজির দাম কমে গেলেও বর্ষা মওসুমের নতুন সবজির দাম এখন চড়া।
হাতিরপুর বাজারে টমেটো ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ১০০ টাকা, সিম ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেশি হলেও বর্ষা মওসুমের নতুন সবজির চাহিদা বেশি বলেও জানান হাতিরপুলের বিক্রেতা আলম।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, বর্ষা মওসুমের আগাম সবজিগুলো বাজারে আসায় শীতের সবজির চাহিদা কমেছে। ঢাকায় কুমিল্লা অঞ্চল থেকে চিচিঙ্গা, করলা, ঢেঁড়ষসহ আরও কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে।