দুজনের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। বয়সের ব্যবধান ছাপিয়ে দুজনের বন্ধুত্বের গভীরতাও অনেক। জাতীয় দলের সফরগুলিতে গল্প, আড্ডা, ঘোরাঘুরিতে একসঙ্গে অনেক সময় কাটান মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। দুজনকে এবার মিলিয়ে দিয়েছে দায়িত্বও। মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন উচ্চতায় উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই মশাল এখন এগিয়ে নেওয়ার ভার তামিমের ওপর। অভিজ্ঞ ওপেনারের বিশ্বাস, এই অভিযানে তিনি সবসময় ছায়া হিসেবে পাবেন মাশরাফিকে।
ওয়ানডের নেতৃত্ব পাওয়ার পর শনিবার প্রথম সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তামিম। মিরপুর একাডেমি মাঠে এসেছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তার নতুন দল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনে। কিন্তু লিগ নিয়ে নয়, তাকে প্রায় সব কথাই বলতে হলো ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে। সেই আলোচনার অনেকটা জুড়ে থাকল মাশরাফির উত্তরসূরি হওয়ার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গ।
মাঠের ভেতরে তো বটেই, মাঠের বাইরেও খুব কাছ থেকে মাশরাফিকে বছরে পর বছর দেখেছেন তামিম। মাশরাফির দর্শন, তার ধরণ, কিভাবে সবকিছু সামাল দিয়েছেন, সবই তামিমের জানা। নতুন অধিনায়ক জানালেন, সাবেক অধিনায়ককে দেখে যা শিখেছেন, কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন নিজের নেতৃত্বে।
“একদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান, ওনার (মাশরাফি) সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাছ থেকে অনেক কিছু দেখেছি। একসঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তার চিন্তা, ধরণ এসব একটু হলেও জানি।”
“আমি চেষ্টা করব যতটা সম্ভব তার কাছ থেকে নেওয়ার। তার মতো নেতৃত্ব দেওয়া খুব কঠিন। তবে আমি যদি কখনও বিপদে পড়ি, প্রথমেই তাকে ফোন করব। তার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করব।”
মাঠের ভেতরে টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল অনেক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মাশরাফি দারুণ ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের প্রমাণ দিয়েছেন অনেকবার। মাঠের বাইরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তুলনাহীন। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের সবার যে কোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে যেভাবে একাট্টা করেছেন এবং দলটাকে গড়ে তুলেছেন পরিবার হিসেবে, মাঠের ক্রিকেটেও সেসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
তামিমের কাছে এটি অবশ্য আপেক্ষিক বিষয়। তার মতে, মাঠে ভালো ফল পেলেই অধিনায়কের ভালো দিকগুলি ফুটে ওঠে।
“আমার যদি ১০টি ভালো গুণ থাকে, কিন্তু দল ভালো না করে, ওই ১০ ভালো গুণ কখনও সামনে আসবে না। নেতিবাচকগুলোই সামনে আসবে। মাশরাফি ভাইয়ের ২০টি ভালো গুণ ছিল। সবকিছু সামনে কেন এসেছে? কারণ তার দল ভালো করেছে। নিজেও ভালো করেছেন। যখন দল ভালো করে, অধিনায়ক নিজে ভালো করেন, তখন তার সব ভালো গুণ সামনে চলে আসে।”
“অন্য কারও হয়তো উনার চেয়ে ভালো ম্যান-ম্যানেজমেন্ট ছিল। কিন্তু দল ভালো করেনি। তখন ওই ব্যাপারগুলো বের হয়ে আসে না। তো, এসব আসলে অনেক পরের ব্যাপার যে আমার কোন জিনিসগুলো ভালো, কোনগুলি খারাপ। যখনই দেখবেন আমার অধিনায়কত্বে দল ভালো করা শুরু করেছে বা আমি ভালো করছি, ভালো গুণগুলি আমার বলা লাগবে না, আপনারাই বের করে আনবেন।”
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে জায়গাটায় আসন করে নিয়েছেন, সেখানে পৌঁছানো অন্যদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পরিসংখ্যানে ও মাঠের ক্রিকেটের ফলে সফলতম অধিনায়ক তো বটেই, দেশের ক্রিকেটে সার্বিক প্রভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন মহানায়ক।
উত্তরসূরির জন্যও মানদণ্ড অনেক উঁচু তারে বেঁধে দিয়েছেন মাশরাফি। তামিম বললেন, তিনি চ্যালেঞ্জ জয়ের চেষ্টা করবেন তার মতো করেই।
“তাকে স্পর্শ করা হবে খুব কঠিন। এখনই যদি আমার কাছে আশা করেন যে ওই লেভেলে চলে যেতে হবে, তাহলে সেটি আমার প্রতি আনফেয়ার হবে। আমি চেষ্টা করব। বলছি না যে আমি পারব না বা এই দল পারবে না। তবে সময় লাগবে। এটি এমন ব্যাপার যে রাতারাতি বদলানো যায় না। পৃথিবীর সব জায়গায় দেখতে পারেন। আশা করব, যত কম সময় আমার লাগবে, তত ভালো হবে আমার জন্য, দলের জন্যও।”
তামিমের ধারণা, বড় কোনো একটি দলকে হারাতে পারলেই দলে বিশ্বাস ফিরবে দ্রুত। তারপর সেই বিশ্বাসই দলকে এগিয়ে নেবে সাফল্যের পথে।
“২০১৫ সালের দল থেকে এখনকার দল একটু আলাদা। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্রিকেটার নেই, অনেকের ফর্মের ওঠা-নামা আছে। কিছু নতুন ক্রিকেটারও আছে দলে। আমরা যে ধরনের দল, ভালো দলকে হারাতে হলে আমাদের অন্তত ৫-৬ জনের পারফর্ম করতে হয়। তো একটি জয় আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেটি বরফ ভেঙে দেবে। আমরা বড় দলকে হারাতে পারি, সেই বিশ্বাসটা আসবে তাহলে। যত দ্রুত আমরা ওই বড় জয়টি পাব, তত তাড়াতাড়ি এই দলটা ভালো করবে।”
আগামী মাসের শুরুতেই করাচিতে একটি ওয়ানডে খেলার কথা বাংলাদেশ দলের। যদিও করোনাভাইরাস সঙ্কটের পর সেই সফর এখন অনিশ্চিত। তবে সফর হলে তামিমের চোখ থাকবে সেই ম্যাচ জয়ে। পাকিস্তানের পর মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ছাড়া এই মৌসুমে আর কোনো ওয়ানডে নেই বাংলাদেশের।