বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৭

image-139125-1584870698

বাংলাদেশে আরও তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; যাদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং একজন পুরনো এক রোগীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট ২৭ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ল, যাদের মধ্যে মোট পাঁচজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি; মোট মৃতের সংখ্যা দুই জনই আছে।

অবশ্য সিলেটে এক লন্ডনফেরত নারী এবং খুলনায় আরও দুজনের মৃত্যুর খবর এসেছে, যারা করোনাভাইরাসের মত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী। তাদের বয়স বিশ থেকে চল্লিশের ঘরে।

“তাদের একজনের কোমর্বিডিটি রয়েছে। তার ডায়াবেটিস ও হাঁপানি আছে। কিন্তু তিনজনের ক্ষেত্রেই লক্ষণ মৃদু। তারা ভালো আছেন।”

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছিল আইইডিসিআর। তারা তিনজনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

পরে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তারাও রোববার বাসায় ফিরবেন বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংক্রমিতদের মধ্যে ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে এমন ৪০ জনকে রাখা হয়েছে আইসোলেশনে।

“হাসপাতালে যারা আছে, তাদের মধ্যে একজনের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তার ডায়ালাইসিস লাগে। তার অবস্থা সেরকমই আছে। বাকি যারা রয়েছেন তাদের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক।”

আইইডিসিআরে এ পর্যন্ত মোট ৬৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৬৫ জনের নমুনা।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “সিলেটে একজন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখনও ফলাফল আসেনি।”

কারও ক্ষেত্রে সন্দেহ করলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে সব প্রটোকল মেনেই তাদের সৎকার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মীরপুরে যে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে,তিনি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার কি না- সেই প্রশ্নে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ বলার আগে তারা আরেকটু সময় নিতে চান।

“তাদের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। মিরপুরে যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে ওই এলাকায় দুজন বিদেশ ফেরতের সন্ধান পেয়েছি। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা দেখতে চাই তাদের মধ্যে কোনো সংক্রমণ ছিল কি না, তার কাছ থেকে এসেছে কি না।”

তিনি বলেন, “আরেকজনের ব্যাপারেও (সিলেট) আইইডিসিআর ব্যাপকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে। অন্যদের ক্ষেত্রে লক্ষণ উপসর্গ হওয়ার চারদিন আগে থেকে কন্টাক্ট ট্রেসিং করলেও তাদের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

“কারণ আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাই।… উৎস চিহ্নিত করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা যাবে। এমনকি তারা যেসব দপ্তরে গিয়েছেন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে সংক্রমণ হতে পারে এমন সম্ভাব্য কেউ আছে কি না।”

সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি এখনও আইইসিইউতে আছেন।

বিশ্বের আরও কয়েকটি জায়গায় কয়েকজন বাংলাদেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছেন বলে খবর এলেও আইইডিসিআর বিস্তারিত তথ্য পায়নি বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রোববার আইইডিসিআর মিলনায়তনের পরিবর্তে সংবাদ সম্মেলন হয় মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএস মিলনায়তনে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Pin It