নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলাকে ‘যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে এতে জয়ে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয় বলে মন্তব্য করলেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ নাকচ করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিশ্বের প্রায় দুইশ দেশে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ রোগে বাংলাদেশে ৩৩ জন আক্রান্ত এবং তিনজনের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাজ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। এর পাশাপাশি রোববার এক বিবৃতিতে সরকারের কাজে অসন্তোষ জানানোর পাশাপাশি নাগরিকদের প্রকৃত তথ্য জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন একদল অধিকরকর্মী ও শিক্ষক।
এনিয়ে প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন,“তথ্য গোপন করে তো আমি যুদ্ধে জেতার আগেই হেরে যাচ্ছি, তথ্য কেন গোপন করব?
“কিছু কৌশলগত বিষয় আছে, কৌশলগত বিষয়টা চায়নাকেও অবলম্বন করতে হয়েছে। কাজেই এসব কিছু কিছু আছে সেগুলো প্রয়োজনে গোপন… যুদ্ধ জয়ের স্বার্থে কৌশল হিসেবে গোপন করাটাও প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এড়িয়ে কিছু করা যাবে না।”
অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “সরকারবিরোধী অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
“সরকারি-বেসরকারি সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে, একটি বৈশ্বিক যুদ্ধকে মোকাবেলা করছি। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাবে যাচ্ছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “আমাদের যারা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বশীল পদে রয়েছে, তারা সত্যটা স্বীকার করলে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করব।”
চীনের অভিজ্ঞতা দেখার পরও কেন ‘লকডাউন’ করা হল না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উম্মুক্ত করে রাখা হয়নি, সেখানে প্রয়োজন হচ্ছে সেখানে লকডাউন করা হচ্ছে।”
একসঙ্গে লকডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন,“সব কিছুই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”
সরকারের প্রতি আস্থা কীভাবে রাখা হবে যেখানে চিকিৎসকদের পিপিই নেই- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে কাদের বলেন, “নেই বলা ঠিক নয়, ঘাটতি আছে। এটা সংগ্রহ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে যা নে,ই তা বিদেশ থেকে আনার চেষ্টা চলছে।”
যারা আক্রান্ত হবে সবাই পরীক্ষা করতে পারছে না- এ বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখানে প্রাথমিকভাবে কিছু দুর্বলতা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে গুজব সৃষ্টি করে আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। গুজব ঠেকাতে প্রশাসন সক্রিয় আছে বলেও জানান তিনি।
গুজব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রশাসনকে জানাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চিকিৎসকদের ৫০০ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিআরটিসির সব বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের। বাসের ট্রিপ শেষে জীবাণুমুক্ত করা এবং সব গাড়িচালক ও সহযোগীকে মাস্ক ও গ্লাভস পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কাদের বলেন, ““সরকারের একমাত্র মনোযোগ অভিন্ন শত্রু করোনা এবং সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এই যুদ্ধে সামিল হতে গোটা জাতিকে আহ্বান জানাই।
“আমি একটা কথা বলছি যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনা সরকার প্রস্তুত আছে।”
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “জনসমাগম হতে পারে এমন কর্মসূচি করা যাবে না। ইউনিয়ন জেলা উপজেলা গ্রাম শহর পর্যায়ে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রস্তুত করে ওই সকল ব্যক্তিদের তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে হবে।”
সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি এড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে করা যায়, সেভাবেই করা হয়।
“না আসতে চাইলে অসুবিধা নেই। সাংবাদিকদের যেভাবে সুবিধা, সেভাবে যার যার সুবিধামতো তথ্যটা তো জানাতে হবে। আসলে ফেইসবুকেও করা যায়। তাহলে ফেইসবুকেই লাইভ করা হবে।”