প্রাণ সংহারী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশের মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা সরকার দেওয়ার পর জুমার নামাজে উপস্থিতি সীমিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে গোটা দেশে সাধারণ ছুটি শুরুর পর জুমার নামাজের আগের দিন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই আহ্বানের কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের পরামর্শ অনুযায়ী আগামীকালের জুমআসহ সকল জামাআতে সম্মানিত মুসল্লিগণের উপস্থিতি সীমিত রাখার এবং ভাইরাস সংক্রমণ হতে সুরক্ষা নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন না করার আহবান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের।”
দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের পরামর্শ অনুযায়ী এই বার্তা পাঠানোর কথা জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ রোগ সংক্রমণ এড়াতে সতর্কতা হিসেবে সবাইকে অন্যদের থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে বলা হচ্ছে সরকারিভাবেই।
এটি ছোঁয়াচে রোগ বলে এর বিস্তার ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে ১০ দিনের ছুটিতে গেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে কাউকে ঘর থেকে বের না হতে বলা হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে।
যে কোভিড রোগে বিশ্বের এই পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং প্রায় ৫ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করেছে, তা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগমের ভূমিকা ছিল।
বাংলাদেশেও নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পর পর দুই দিন দুই মুসল্লির মৃত্যুর পর রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগের দুটি মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় বন্ধ রেখেছে এলাকাবাসী।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম কমিয়ে আনতে সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে নামাজ বন্ধ করা হয়েছে মক্কা ও মদীনার মসজিদেও।
তবে বাংলাদেশে এখনও মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত না হলেও ঘরে বসেই নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মুসলমানদের; অন্য ধর্মের মানুষদেরও ঘরেই প্রার্থনা করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মহামারীর এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আলেম ও ওলামারা সভা করেন।
তাতে আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, মারকাযুত দাওয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, শায়খ যাকারিয়া (র.) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. আল্লামা কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল আযহারী, জামেয়া রহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, ইদারাতুল উলুম আফতাবনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. নজরুল ইসলাম আল মারুফ, নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, তেজগাঁও জামেয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান ও মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী অংশ নেন।
ওই সভায় ‘কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মহামারী ও দুর্যোগকালীন সময়ে ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণের’ ক্ষেত্রে মসজিদে নামাজের জামায়াতে উপস্থিতি সীমিত করার আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
তাতে বলা হয়, আলেম-ওলামারা দেশের মুসলমানদের উদ্দেশে চারটি আহ্বান জানিয়েছেন।
>> করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এবং মানুষের ব্যাপক মৃত্যুঝুঁকি থেকে সুরক্ষার জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধের পাশাপাশি মসজিদসমূহে জুমআ ও জামাআতে সম্মানিত মুসল্লিগণের উপস্থিতি সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
>> মসজিদ বন্ধ থাকবে না, তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে সুরক্ষা নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন করবেন না।
>> সরকার ও বিশেষজ্ঞগণ সতর্কতার জন্য যেসব নির্দেশনা প্রদান করছেন তা মেনে চলার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
>> সবাইকে অপরাধমূলক কাজকর্ম থেকে বিরত হয়ে ব্যক্তিগতভাবে তওবা, ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াত অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানানো হয়।
যাদের হাঁচি, কাশি কিংবা জ্বর রয়েছে তাদেরকে বাসায় বসে জুমার পরিবর্তে জোহরের নামাজ পড়ার আহবান করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি বয়স্ক মুসল্লিদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আপাতত কিছুদিন সব নামাজই বাসায় পড়তে অনুরোধ করা হয়েছে।