নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে খেটে খাওয়া মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের কাছে খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ও ত্রাণ তহবিলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ২০ হাজার পিপিই ও আর্থিক অনুদান গ্রহণকালে তিনি এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুদান গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত মানুষের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে দীর্ঘ দিন এই অবস্থা চলার জন্য তারা সত্যিই খুব কষ্টে আছে। ইতোমধ্যে আমরা সমগ্র বাংলাদেশেই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খাদ্যশস্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন পর্যায়ক্রমে সেটা দেওয়া হবে।
“সেই সাথে সাথে আমি আরেকটা নির্দেশ দিচ্ছি, আমরা যেমন ভিজিএফ, ভিজিডি দেই বা অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি সেগুলো অব্যাহত থাকবে। এগুলো তালিকাভুক্ত আছে। এর বাইরে ‘যারা দিন আনি দিন খাই’ এই অবস্থায়, তারা এখন কাজ পাচ্ছে না।
“যেহেতু মানুষ ঘরে বসা। তাদের ঘরে এত খাবার কিনে মজুদ রাখার মতো অবস্থা নাই। এই শ্রেণির মানুষদের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাদের তালিকা করতে হবে এবং তাদের কাছে খাদ্যশস্য সব কিছু যা যা প্রয়োজন তা পৌঁছে দিতে হবে।”
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রত্যেকের চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষা নিশ্চিতের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সকলকে বলব, ঘাবড়ালে চলবে না। এই অবস্থার মোকাবেলা করতে সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেভাবেই সবাইকে চলতে হবে, যাতে আমরা দেশের জনগণকে সুরক্ষিত করতে পারি।”
নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে চলার উপরও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাইকে বলব ঘর থেকে বের হবেন না আর নিজে ঘুরে বেড়াব- এটা তো হয় না। যে কারণে আপনারা যখন এসেছেন কিছু দিতে আমি সব সময় নিজে উপস্থিত থেকেই আমি এটা গ্রহণ করেছি, এবার আমি অত্যন্ত দুঃখিত আমি নিজে নিতে পারলাম না। আমাকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে।
“আমার একটু খারাপই লাগছে। কারণ আপনাদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে পারলাম না। এই যে দেখা করতে পারলাম না এটার আরও একটা কারণ হচ্ছে যে, আসলে আমি যদি নিজেই এটা না মানি তাহলে অন্যকে মানতে বলব কীভাবে? সেটাও একটা বিষয়।”
এই ছুটিতে ঘরে বসে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছুটি মানে এই না সবাই একেবারে কাজ ছেড়ে বসে থাকবে। যার যার কাজ করতে হবে। ঘরে বসে করবে। কিন্তু মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ দেখা যাচ্ছে এটা মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই এখন গ্রামে চলে গেছেন। তারা এখন বসে না থেকে যার যেখানে যতটুকুই জমি আছে সেই জমি যাতে অনাবাদি না থাকে, তাতে ফসল ফলান।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ব্যাপকভাবে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একট সন্তুষ্টির বিষয় হচ্ছে, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর, মানুষগুলো কর্মঠ, আমাদের খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মাটি ও মানুষ মিলে যদি আমরা কাজ করি তাহলে নিজেদের খাদ্য নিজেরাই জোগাড় করতে এবং অন্যকেও আমরা সহযোগিতা করতে পারব।
“আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ যারা সহযোগিতা চেয়েছেন তাদেরকেও সহযোগিতা করতে পারব। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে এবং মানবিক কারণেই আমরা তা করব। শুধু নিজেদের দেশ নয়, অন্য দেশেরও যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।”
শিল্প, কল-কারখানায় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিল্প-কলকারখানা সেই বিষয়ে আমাদের নির্দেশ আছে.. মালিক-শ্রমিক এরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা চালাতে পারবে। কিন্তু সেখানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাঙালি কখনো হারেনি, আমরা হারব না- এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। সেজন্য নিজেকে যেমন সুরক্ষিত রাখতে হবে তেমনি অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।”