করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে নতুন চাপ বাংলাদেশের সামনে। অনিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত নিতে চাপ দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কোনো দেশের নাম প্রকাশ না পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, চার পাঁচটি দেশ চিঠি দিয়েছে।
রোববার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার সঙ্কটের এই সময়ে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে দেশগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কত কর্মী ফেরত আনতে চাপ রয়েছে তা জানাননি তিনি।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। এতে সিদ্ধান্ত হয় কুয়েতের অনুরোধে দেশটি থেকে ৩১৬ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফেরত আসাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে আইএসের মতো জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের ফেরত আনা হবে না।
মালদ্বীপের নাম নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশটিতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী আছেন, যাদের কেউ কেউ অবৈধ। করোনার কারণে মালদ্বীপে পর্যটন খাতে কাজ নেই। শুধু বৈধ বিদেশি কর্মীরা সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন। সাহায্য না পেয়ে অবৈধদের কষ্ট হচ্ছে। মালদ্বীপ অবৈধদের ফেরত পাঠাতে চাইছে।
আব্দুল মোমেন জানান, তার সঙ্গে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেছেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখতে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করেনা পরিস্থিতিতে সব দেশর মতো বাংলাদেশেও চাপের মধ্যে আছে। চিঠি দেওয়া দেশগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, এ মুহুর্তে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে দেশে ‘লকডাউন’ জারি করা হয়েছে। কাজ করতে পারছেন না প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা। সবচেয়ে সঙ্কটে আছেন অবৈধ কর্মীরা। তারা কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সরকার খাদ্য, চিকিৎসাসহ সামগ্রিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসীকে ফেরত আনা বিমানে সে দেশে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
ইমরান আহমদ জানান, লকডাউনের কারণে যেসব বাংলাদেশি কর্মীর ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তা নবায়ন করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। তার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে দেশগুলো সংশ্নিষ্ট দপ্তরে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যারা দেশে ছুটিতে থাকা অবস্থায় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারা যাতে পুনরায় যেতে পারেন, সেই আশ্বাস পাওয়া গেছে।
বিদেশে যেসব কর্মী কাজ হারাবেন তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, চাকরিচ্যুত কর্মীদের দেশে ফেরত না এনে বিদেশেই অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনে ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে।