নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দুর্গতদের জন্য দেওয়া ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া নিম্নআয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য ত্রাণ দিচ্ছে সরকার। এই ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসছে।
‘মুখ না দেখে’ ত্রাণের চাল চোরদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ চোরদের এই হুঁশিয়ারি দেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “স্পষ্ট ভাবে একটা কথা বলতে চাই, ত্রাণ বিতরণে কোনো রূপ অনিয়ম সহ্য করা হবে না। খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাণ নিয়ে যারা-ই ছিনিমিনি খেলবে, তারা যে-ই হোক তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।”
জাতীয় এই সংকটে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “করোনাভাইরাস নামক এ অদৃশ্য শক্তিকে পরাজিত করতে আমাদের সকলকে আজ দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল মতপার্থক্য ভুলে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সবাইকে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
“এই লড়াইয়ে জিততে হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।”
বিত্তবানদের প্রতি কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, “এই মুহূর্তে এই দুর্যোগে খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের সামর্থ্যবান বিত্তবান মানুষ এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তাদের চলমান প্রয়াস আরও জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
একটি ‘কুচক্রী মহল’ এই দুর্যোগের মধ্যেও গুজব ছড়াচ্ছে মন্তব্য করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “এ সকল গুজবের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকার এবং গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।”
করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্স, হাসপাতালকর্মী ও চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অতীতের মতো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, ঘরে ঘরে অবস্থান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যারা পারবেন না তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন।”
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই সংকটের মধ্যেও আমি জাতিকে শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুখবর দিচ্ছি। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতুর ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের উপর ২৮তম স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে।
“এর ফলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর ৪.২ কিলোমিটার দৃশ্যমান হল। আর বাকি রইল ১৩টি স্পানের কাজ। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও দেশি-বিদেশি যে সকল প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, শ্রমিক ও পরামর্শক তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী কাদের বলেন, সরকার সাধারণ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করায় দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তও সে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। তবে পণ্যবাহী পরিবহন, খাদ্যদ্রব্য, জরুরি সেবা, পচনশীল দ্রব্য পরিবাহী, ওষুধ শিল্প, ত্রাণবাহী গাড়ি, গণমাধ্যম, কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্য পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
পণ্য পরিবহনের নাম করে গাড়িতে যাত্রী পরিবহনে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী বহন করা যাবে না এমন নিষেধাজ্ঞা অনেকে মানছেন না।”