শিল্প ও সেবা খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করবে। প্রতিটি ব্যাংকে গঠিত এ প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর।
তবে একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের বিপরীতে সরকার সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য ভর্তুকি দেবে। এখান থেকে ঋণ নিয়ে কেউ আগের ঋণ সমন্বয় করতে পারবে না। ইতিপূর্বে খেলাপি হয়েছেন বা খেলাপি ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করেছেন এরকম ব্যক্তি এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন ব্যবসা চালুর জন্য এ তহবিলের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে না।
নীতিমালার আলোকে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চলতি মূলধন ঋণ নিতে পারবে। যেসব ব্যবসায়ী আগে ঋণ সুবিধা নেননি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ তারাও ঋণ পাবেন। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীর নুন্যতম রেটিং হতে হবে মার্জিনাল বা প্রান্তিক। আর যেসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন সুবিধা নিয়েছে তারা বিদ্যমান সীমার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ এ তহবিল থেকে নিতে পারবে। ব্যাংকগুলোর কাছে অনেক ক্ষতিগ্রসস্থ প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে সেক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের আগে ঋণ দিতে হবে। পরবর্তী বছরে ধারাবাহিকভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সুবিধা দিতে হবে। একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘন করে কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না। ঋণ আদায়ের দায়-দায়িত্ব থাকবে ব্যাংকের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে ‘বিশেষ মনিটরিং ইউনিট’ নামে একটি ইউনিট থাকবে। এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো এ ইউনিটে যোগাযোগ করবে।
নীতিমালা বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। আর ভর্তুকী হিসেবে পাবে আরও সাড়ে ৪ শতাংশ। এতে করে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় হবে ৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলো নিজস্ব ঋণ নীতিমালার আলোকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে প্রতিটি ঋণ বিতরণের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সম্মতিপত্র নিতে হবে। ভর্তুকীর টাকার জন্য আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগে। ব্যাংকগুলো কি পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে তা করবে করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ২০১৯ সালে এ খাতে কি পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার ওপর।
এতে আরও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিতকরণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দিতে গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য চলতি মূলধন হিসেবে ৩০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন। উক্ত প্যাকেজের আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি মূলধন ঋণ দেবে। গ্রাহক পর্যায়ে সহনীয় সুদহার কার্যকরের বর্তমানে চলমান ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে সরকার ভর্তুকী হিসেবে দেবে সাড়ে ৪ শতাংশ।
বর্তমান পরিস্থিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার জন্য এই নীতিমালা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।