সারাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শহর এলাকায় চালু হওয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে স্থগিত করেছে সরকার। তবে গ্রাম এলাকায় ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণের যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সেটি চালু থাকবে। একই সঙ্গে অনিয়ম বন্ধে নতুন ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অনিয়মকারীদের জামানত বাজেয়াপ্ত ও ডিলারশিপ বাতিল করে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নতুন ডিলার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। অনিয়মের অভিযোগে যাদের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে, ভবিষ্যতে তারা খাদ্য বিভাগের অন্য কোনো কার্যক্রমে আর ডিলার হতে পারবে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে ১০ টাকার চাল আত্মসাতের ঘটনায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমানকে আহ্বায়ক করে সোমবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তাহমিদুল ইসলাম এবং যুগ্ম সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনীকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচি পরিচালনার নীতিমালা পর্যালোচনা এবং মাঠ পর্যায়ে স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে বস্তুনিষ্ঠ সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের চিঠি দিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। চাল কালোবাজারির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডিলারদের কঠোরভাবে দমন ও শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারি চাল কালোবাজারি বা চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) চিঠি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘চালের দাম কম হওয়ায় যার প্রয়োজন নেই বা বাজার থেকে কেনার সামর্থ্য আছে, তিনিও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ফলে বেশি সমাগম হচ্ছে। তাই জনগণের চাপ কমাতে ও করোনা সংক্রমণ রোধে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।’
দশ টাকার চালে অনিয়মের কথা স্বীকার করে খাদ্য সচিব বলেন, ‘অনিয়ম হচ্ছে না তা বলব না। ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে আগেও অনিয়ম হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর নজরদারির ফলে অনেকে ধরা পড়ছে। যারা ধরা পড়ছে তাদের নামে ফৌজদারি মামলা হচ্ছে। যেসব ডিলার তাদের নিয়োগের আদেশ ও অঙ্গীকারনামার শর্ত ভঙ্গ করছে, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত ও ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ডিসিরা তাদের বিবেচনায় নতুন ডিলার নিয়োগ দিতে পারবেন।’
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘১০ টাকা দরের ওএমএস কর্মসূচির চাল সারাদেশের শহর এলাকায় সোমবার থেকে বন্ধ করা হয়েছে। তবে গ্রাম এলাকায় ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণের যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সেটি চালু থাকবে। এসব চাল বিতরণে কোনো ডিলার অনিয়ম করলে স্থায়ীভাবে তার ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। অনিয়মকারী ডিলাররা তাদের ডিলারশিপ পরে আর ফিরে পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ওএমএসের চাল বিক্রি করতে গিয়ে অনেক বিড়ম্বনা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই গরিব মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ওএমএসের চাল পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’ নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে চলমান সাধারণ ছুটির সময় নিম্নআয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষায় গ্রামের পাশাপাশি শহরেও গত ৫ এপ্রিল থেকে ওএমএসের আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রি ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা জেলার ওএমএস ডিলার শাহ আলম বলেন, ‘কিছু ডিলারের অনিয়মের কারণে সবার ওপরে চাপ আসছে। তাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ডিলারদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’