ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ঘৃণার ভাইরাস ছড়িয়ে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী।
বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সোনিয়া বলেন, লকডাউনের কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনার ব্যাপারেও সরকার ‘মমত্ববোধ ও তৎপরতা’ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এদিনই প্রথম বিজেপি’র বিরুদ্ধে একহাত নিলেন সোনিয়া।
ক্ষমতাসীন দলের ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ভাইরাস’ ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারতের প্রত্যেক নাগরিকেরই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
তার কথায়,“যখন আমাদের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এক হওয়া উচিত, তখনো বিজেপি সাম্প্রদায়িক কুসংস্কার ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এটি আমাদের সামাজিক ঐকতানের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি। আমাদের দল এবং আমাদেরকে এই ক্ষতি পূরণে কাজ করতে হবে।”
কংগ্রেস সভাপতি জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কয়েক দফা চিঠি লিখে গঠনমূলক সহযোগিতার প্রস্তাব এবং গ্রামীণ ও শহুরে মানুষজনের কষ্ট লাঘবে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।
“দূর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা আংশিক ও ছাড়া ছাড়া উপায়ে কাজ করেছে। যে মমত্ববোধ, আন্তরিকতা ও ব্যগ্রতা কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে থাকা উচিত ছিল রহস্যজনকভাবে তার অনুপস্থিতি দেখা গেছে। লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ায় কৃষক ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।”
“বিশেষ করে আমাদের কিষাণ ও ক্ষেত মজদুর, পরিযায়ী শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ও অসংগঠিত খাতের শ্রমিকরা সংকটে পড়েছেন। ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বন্ধ হয়ে আছে, কোটি কোটি মানুষের জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে,” বলেন সোনিয়া।
ভারতে আপাতত ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন দেওয়া আছে। এরপর পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো যাবে, কেন্দ্রীয় সরকারের এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই- এমন অভিযোগ করে সোনিয়া বলেছেন, “এখনকার অবস্থায় ফের লকডাউন দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
ভারতে করোনাভাইরাস শনাক্তে স্বল্প সংখ্যক পরীক্ষা, টেস্টিং কিটের ঘাটতি এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা ব্যক্তিদের দেওয়া নিম্নমানের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়েও অভিযোগ করেন সোনিয়া।
তিনি বলেন, রেশনধারী অনেকের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছায়নি, তাছাড়া প্রায় ১১ কোটি মানুষ এখনো এ গণবন্টন ব্যবস্থাপনার বাইরেই রয়ে গেছে। সংকটের এ সময়ে প্রতিটি পরিবারকে মাসে ১০ কেজি খাদ্যশস্য, ১ কেজি এবং আধাকেজি চিনি দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকা উচিত ছিল।
প্রথম দফার লকডাউনে ১২ কোটির বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে উল্লেখ করে সংকট মোকাবেলায় প্রতিটি পরিবারকে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার রুপি নগদ দেয়া ‘জরুরি’ ছিল বলে মন্তব্য করেন সোনিয়া।