কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নেওয়া ঋণের সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা ইতোমধ্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন, কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে এই কয় মাস সবকিছু বন্ধ দেখে আপনাদের তো ঋণের সুদ হয়ে গেছে, সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। কারণ এই সুদ এখনই নেওয়ার কথা না।”
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এই সুদগুলো যাতে স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায় আর কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন সেটা বিবেচনা করা হবে। কাজেই সেটা নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না।“এইটুকু আমি বলব, এটাই আমাদের সব থেকে বড় কথা, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা আর আমাদের জীবন জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা।”
করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকতে বলে সরকার।
অধিকাংশ কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই সময় বন্ধ রাখা হয়, সীমিত করা হয় কাঁচাবাজার ও দোকানপাট খোলা রাখার সময়।
সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল এই ‘ছুটির’ মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই আদেশে বলা হয়, “ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও পরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।”
বিধিনিষেধের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাও ভিডিও কনফারেন্সে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মানুষের কাজ নেই। বিশেষ করে আমাদের যারা একেবারে হতদরিদ্র, তাদেরকে যেমন আমরা সাহয্য দিচ্ছি, কিন্তু নিম্নবিত্ত… এমনি ছোটখাটো কাজ করে যারা খায়. তাদের জন্যও যথেষ্ট কষ্ট… আমরা জানি।”করোনাভাইরাস সঙ্কটের অভিঘাত সামাল দিতে বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একবারে ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শুরু করে- যেমন মৎস্যচাষী থেকে শুরু করে পোল্ট্রি, ডেইরি এবং কৃষিকাজ যারা করেন, বা বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো ব্যবসা বা ক্ষুদ্র ব্যবসা যারা করেন, প্রত্যেকের কথা চিন্তা ভাবনা করে এবং অন্যান্য দিকে খেয়াল রেখে আমরা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছি এবং সেটা ভাগে ভাগে।
“যাদের ছোটোখাটো ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কিন্তু এখান থেকে মাত্র ২ পারসেন্ট ইন্টারেস্টে আমরা এই টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি, সেই ব্যবসাগুলো যাতে চালু রাখতে পারেন।”
রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি খুব ভালো একটা জিনিস দেখলাম। এই জেলাগুলো এখনও সেই রকম সংক্রমিত হয়নি, যথেষ্ট ভালো আছে।
“আমি মনে করি, এই বিষয়টা আপনাদের ধরে রাখতে হবে। যেন আর কেউ সংক্রমিত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন, সেটাই আমরা চাই।”