ঢাকাসহ সারাদেশে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬৪ গণমাধ্যমকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ১২ গণমাধ্যমকর্মী করোনা থেকে সেরে উঠেছেন। করোনায় মারা গেছেন দৈনিক সময়ের আলোর চিফ রিপোর্টার ও নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন। এছাড়া করোনা উপসর্গে মারা গেছেন একই পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মাহমুদুল হাকিম অপু।
গণমাধ্যমকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিয়মিত আপডেট দেওয়া ফেসবুক পেজ ‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার’ বুধবার রাতে এ তথ্য দিয়েছে।
তাদের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে মোট ৬৪ গণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২ জন। তারা হচ্ছেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র এক ক্যামেরাপার্সন, যমুনা টিভি’র এক রিপোর্টার ও নরসিংদী প্রতিনিধি, দীপ্ত টিভি’র এক সংবাদকর্মী, এটিএন নিউজ-এর এক রিপোর্টার, একাত্তর টিভি’র গাজীপুর প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর-এর এক রিপোর্টার, দৈনিক সংগ্রামের এক সংবাদকর্মী, ভোরের কাগজের বামনা উপজেলা (বরগুনা) প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পত্রিকা’র সম্পাদক, দৈনিক প্রথম আলো’র বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ-এর কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- আমাদের নতুন সময়-এর এক সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টিভি’র সাধারণ সেকশন এক কর্মকর্তা, রেডিও টুডে’র নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, দীপ্ত টিভি’র ৫ সংবাদকর্মী, চ্যানেল আই’য়ের অনুষ্ঠান বিভাগের একজন, পূর্বপশ্চিম ডটকম-এর জামালপুর প্রতিনিধি, দৈনিক আজকালের খবর-এর বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি, নিউজ পোর্টাল বি-বার্তা’র এক সংবাদকর্মী, দৈনিক ইনিকলাব-এর এক সংবাদকর্মী, দৈনিক জনতা’র এক সংবাদকর্মী, দৈনিক কালেরকণ্ঠ-এর একজন ফটোগ্রাফার, এনটিভি’র ১৫ সংবাদকর্মী (দু’জন রিপোর্টার, একজন নিউজ এডিটর, ছয় ক্যামেরাম্যান, দু’জন নিউজ প্রেজেন্টার, একজন মেকাপম্যান, অনুষ্ঠান বিভাগের আরও ৩ জন), দৈনিক আমার বার্তা’র সম্পাদক, আরটিভি’র তিনজন সংবাদকর্মী, বাংলাভিশন-এর একজন রিপোর্টার, এসএ টিভি’র গাজীপুর প্রতিনিধি।
আরও চিকিৎসাধীন রয়েছেন- দৈনিক সময়ের আলো’র তিনজন সংবাদকর্মী ও জেনারেল সেকশনের তিন কর্মী, যশোরের স্থানীয় দৈনিক লোকসমাজ-এর একজন সাব-এডিটর, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ-এর একজন রিপোর্টার, নতুন সময় টিভি’র (আইপিটিভি) একজন নিউজ প্রেজেন্টার, দৈনিক দেশ রূপান্তর-এর ফিচার বিভাগের একজন সংবাদকর্মী, রেডিও আমার-এর সংবাদকর্মী, দৈনিক ইত্তেফাক-এর একজন সংবাদকর্মী, দেশ টিভি’র একজন নিউজ প্রেজেন্টার, বিটিভি’র একজন কর্মকর্তা ও ডিবিসি নিউজ এর একজন সংবাদকর্মী।
আক্রান্ত সাংবাদিকদের তালিকা তৈরির বিষয়ে ‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার’ ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন আহম্মদ ফয়েজ বলেন, আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের এবং তাদের সহকর্মীদের মাধ্যমে নিশ্চত হয়ে এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে এই তালিকায় যুক্ত করা হয় না। এই কাজ করার মূল কারণ হচ্ছে, আমরা যখন দেখলাম কোনো সাংবাদিক সংগঠন বা কোনো প্রতিষ্ঠান আলাদা করে গণমাধ্যমকর্মীদের হিসেব রাখছে না তখন আমরা মনে করলাম শুধুমাত্র নিশ্চত সংখ্যাগুলোকে যতটা সম্ভব একটি জায়গায় রাখা প্রয়োজন। সেই তাগিদ থেকেই এই কাজটি করা। এটি আমার একার কাজ নয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সহায়তা করছেন।
আহম্মদ ফয়েজ বলেন, সাধারণত ডাক্তাররা প্রস্তুতি নিয়ে রোগী দেখার সুযোগ পান, কারণ তারা সংক্রামনের ঝুঁকি সম্পর্কে সুর্নিষ্ট ধারণা রাখতে পারেন। কিন্তু মাঠের সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের কাজে প্রতিনিয়ত নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হাসপাতাল, গোরস্তান এবং জনসমাগমে যেতে হয়। এভাবে যেমন সংবাদকর্মীরা ঝুঁকিতে পড়েন। এ ছাড়া আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মস্থল বা নিউজরুমগুলো খুব কাছাকাছি হয়ে থাকে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ে। এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশী সেসব প্রতিষ্ঠানে শুরুর দিকে অনেক বেশী অবহেলা ছিল। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে করোনা জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার স্থাপন করা হয়েছে। ডিআরইউ’র এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, উন্নত প্রযুক্তির এই চেম্বার দিয়ে প্রবেশ করলে পোশাক ও শরীর জীবাণুমুক্ত হবে। এর ফলে বাহ্যিকভাবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে না।
এ চেম্বারের উদ্বোধন করে তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের কারও মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য আরও কিছু ভালো উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরিই জানাতে পারবেন।’