করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে সরকার ঈদ সামনে রেখে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত দিলেও এই অবস্থার মধ্যে দোকান খোলার ঝুঁকি নেবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
দোকান খুলবে না কি বন্ধই রাখা হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুই ধরনের মত দেখা দিয়েছে বলে দোকান মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন।
নিজেদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া কর্মচারীদের ফিরিয়ে আনা, নানা ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং তারপরে ক্রেতা আসবে কি না- এই সব বিষয় ভাবাচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে এক মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার সরকার শপিং মল ও মার্কেট ১০ মে থেকে খোলা রাখার অনুমতি দেয়। বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে প্রতিদিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলার সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে অতি সংক্রামক এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি সে পর্যন্ত গণপরিবহনও বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শপিং মল খোলা হবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দেশের বৃহত্তম দুই প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা শপিং সেন্টার ও যমুনা ফিউচার পার্ক।
রাজধানীতে ঈদ কেনাকাটার সবচেয়ে বড় জমায়েত নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একটি অংশও দোকান চালু না করার পক্ষে রয়েছেন।
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহীন বুধবার বলেন, “সরকার দোকান খোলার অনুমতি দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুই ধরনের মতের সৃষ্টি হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা আগামী ১০ মে থেকে মার্কেট চালু করব কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারি নাই। আগামী দুই একদিনের মধ্যে ব্যবসায়ী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
শাহীন বলেন, এখন প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। এর মাঝে কিছু কিছু কারখানা খুলে দেওয়ার পর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানিদের পক্ষ থেকেও খুলে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। সরকার তাদের দাবি মেনে খোলার অনুমতিও দিয়েছে।
“বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিদিনই যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে মন বলে যে, এখনই দোকান খোলার দরকার নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অনেকে মতামত দিচ্ছে যে, সরকার যেহেতু অনুমতি দিয়েছে আমরা দোকান খুলে ফেলি।”
ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতা বলেন, “সময় এখনও হাতে আছে। দোকান বন্ধ রাখব কি না সেটা আমরা নির্বাহী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেব। সেই সিদ্ধান্ত যদি না নিই তাহলে তো খোলার সুযোগ থাকছেই।”
সরকার দোকান খোলার অনুমোদন দেওয়ার পর নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় বসেছেন পুলিশের রমনা জোনের কর্মকর্তারা।
মার্কেটের চারটি গেইটের মধ্যে দুটি গেইট খোলা রাখা, এসব গেইটে জীবাণুনাশক টানেল বসানো, হ্যান্ড গ্লাভস-মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দেওয়া, পুরো মার্কেট পরিষ্কার রাখাসহ আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।
“এতোগুলো পদক্ষেপ নিয়ে দোকান পরিচালনা করা কঠিন। তারপরও আমরা গ্যারান্টি দিতে পারব না যে কী পদক্ষেপ নিলে পরে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে,” বলেন শাহীন।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ মঞ্জু বলেন, “দোকান খোলা কিংবা বন্ধের বিষয়ে আমরা নিজেরা এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তারপরেও টিভির স্ক্রলে দেখলাম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা প্রচার করা হচ্ছে।”
ঈদের আগে শপিং মল বসুন্ধরা-যমুনা কোনোটিই খুলছে না
তিনি বলেন, “নিউ মার্কেটের মতোই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা কমিটির লোকজন বসব। যেসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলো নেওয়ার মতো সুযোগ আছে কি না। আমাদের মার্কেটের গেইট অনেক বেশি এবং সেগুলো বেশ সরু। এখন লোক ঢুকতে থাকলে তো ক্রেতাদের বাধা দেওয়া যাবে না। সেই অর্থে কন্ট্রোল করা খুব কঠিন হবে। এই বিষয়গুলো আমরা চিন্তা করছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারিনি।”
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে ৪০৬টি দোকান রয়েছে। আরও প্রায় দুই হাজার দোকান রয়েছে চাঁদনী চক ও নিউ মার্কেট চত্বরে।
চাঁদনী চকের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, “আমরা এখনও দোকান চালু করার সিদ্ধান্ত নেইনি। এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অনেকটা আত্মঘাতীমূলক হয়ে যাচ্ছে।
“দোকান চালু করলে যদি ক্রেতা আসে তাহলে হয়ত সাম্প্রতিক ক্ষতি কিছুটা পোষাবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কাস্টমারই বা কেন আসবে? আমরা তো কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।”
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আগামী ১০ মে দোকান খোলা নিয়ে ইতোমধ্যেই কিছু মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা স্পষ্ট। সেখানে বলা হয়েছে রমজান উপলক্ষে ব্যবসা চালু রাখার স্বার্থে সীমিত পরিসরে দোকানপাট চালু রাখা যাবে।
“তবে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। বড় বড় শপিং মলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে, শপিং মলে আগত যানবাহনগুলো জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
“যারা এই বিষয়গুলো প্রতিপালন করতে পারবেন তারা দোকান চালু করবেন। যারা এই বিষয়গুলো প্রতিপালন করতে পারবেন না তারা দোকান বন্ধ রাখলেও কোনো সমস্যা নেই।”
হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বড় হটস্পট মনে করা হচ্ছে।
“সে ক্ষেত্রে স্ব স্ব মার্কেট কমিটি ও মার্কেট মালিক যদি মনে করেন বন্ধ রাখবেন তাতে কারও কোনো সমস্যা নেই।”
ঢাকার অধিকাংশ শপিং মল ও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার একদিন আগেই। নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা দুই সপ্তাহ ধরে ক্রেতা উপস্থিতি কমে যাওয়ায় দোকান বন্ধ করা হয় বলে সেই সময় ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছিলেন।