দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় করোনাভাইরাস এক বিরাট ধাক্কা হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এতে দমে না গিয়ে মনোবল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, এই রকম অবস্থা থাকবে না, পরিবর্তন আসবে।
“আমি আশা করি, এই বাধাও দূর করে আগামী দিনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী যেই সমস্যা সেই সমস্যাটাও দূর হবে।”
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রোববার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে একথা বলেন শেখ হাসিনা। ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে অনুদানের চেক দেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস সেগুলো গ্রহণ করেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে। এই করোনাভাইরাস আমাদের সেই যাত্রা অনেকটা ব্যাহত করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
আশাবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লাহর রহমতে আমি মনে করি, এই রকম অবস্থা থাকবে না, পরিবর্তন আসবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু আমরা আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিছু জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যাতে মানুষ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করছি।
“কারণ এটা রোজার মাস। আমি জানি মানুষের খুবই কষ্ট। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দারিদ্র্যমুক্তির জন্য তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সফলতাও আমরা এনেছিলাম। আমাদের আশা ছিল, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপন করব।
“মুজিববর্ষ থেকে সুবর্ণজয়ন্তি, ২০২০ থেকে ২০২১ এর মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারবে।”
এই করোনাভাইরাসের কারণে সেই যাত্রা ব্যাহত হওয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের মানুষকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলারও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
শারীরিক অসুস্থতায় মানসিকভাবে শক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলব এই অসুখ-বিসুখ হলে মানুষকে মনে সাহস রাখতে হবে। কারণ শুধু ডাক্তার বা ওষুধ দিয়েই ভালো হবে না। মনের জোর থেকে আত্মবিশ্বাস থেকেও কিন্তু অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়।”
করোনাভাইরাস নিয়ে ভীত হয়ে অমানবিক আচরণ না করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মানুষ আবার মাঝে মাঝে বোধ হয় এত বেশি ভীত হয়ে যায় যে, অনেক সময় অনেক অমানবিক আচরণও করে। কারণ একজন পরিবারের সদস্য যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তার কী অসুখ হল না জেনেই তাকে দূর দূর ছাই ছাই করা বা তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া, এটা কিন্তু ঠিক না।
“নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। হাতে গ্লাভস দিয়ে, মুখে মাস্ক দিয়ে যে কোনো পরিবার তাদেরকে সহযেগিতা করলে এতে খুব একটা ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে দূরে করে দেওয়া বা স্ত্রী হয়ে স্বামীকে দূরে করে দেওয়া বা সন্তান হয়ে বাবা-মাকে দূরে করে দেওয়া এটা কিন্তু কখনোই কল্যাণকর নয়।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা লাশ দাফন থেকে শুরু করে, রোগী টানা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ কিন্তু করে যাচ্ছে। তাদের সাথে আজকে আমাদের ছাত্রলীগের কর্মীদেরও আমরা দেখেছি যে অনেক ক্ষেত্রে হয়ত লাশ দাফন করার কেউ নেই তারা নিজেরা গিয়ে সেখানে লাশ দাফন করে দিচ্ছে।
“এই যে মানবিক গুণগুলো, এটাই হচ্ছে মনুষ্যত্ব। এটাই আমাদের বাঙালির সবচেয়ে বড় চরিত্র। কাজেই এই চরিত্রটাই সকলের থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।”
এবার ব্যাপক ধান উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খাদ্যের কোনো অভাব নেই। আমরা ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণও করে যাচ্ছি। আমরা সরকারিভাবে করছি, দলীয়ভাবে করছি, অনেক বিত্তশালীরা করছে, সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারছে সবাইকে সাহায্য করে যাচ্ছে।”
আগামীতে যেন খাবারের অভাবে পড়তে না হয় সেজন্য কোনো জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
“কৃষিমন্ত্রীকে এরইমধ্যে আমি বলেছি, ধান কাটার পর সেখানে কী কী ফসল ফলাতে পারে, কোন কোন এলাকায়। কারণ আমাদের আবার এলাকাভিত্তিক ফসল হয়। সেটা চিন্তা করে, সেই ধরনের ফসল, শাক সবজি, তরিতরকারি বা ফলমূল যে যা পারে মাছ বা সবকিছু উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে। অন্তত খাদ্যের নিরাপত্তাটা যেন নিশ্চিত থাকে,” বলেন তিনি।