যে ১০ তারার আলো জাতীয় দলে পড়েনি

10-cricketer-samakal-5eba703a4892e

নাঈমুর রহমান দুর্জয়, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজন কিংবা আকরাম খান, হাবিবুল বাশারদের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা শুরু। মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা সেটাকে বিশ্বমানের দলে পরিণত করেছেন। তবে এই সময়ে হারিয়ে গেছেন প্রতিভাবান আরও কিছু ক্রিকেটার।

অলক কাপালি: বাংলাদেশ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে পেয়েছে। আর একজন সাকিব না হোক বিশ্বমানের একজন স্পিন অলরাউন্ডার হতে পারতেন অলক কাপালি। নিঁখুত টেকনিকের ব্যাটিং, শট খেলার পারদর্শীতার সঙ্গে কার্যকর একজন লেগ স্পিনার তিনি। দেশের হয়ে ৬৯ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি আছে পাঁচটি। অলক ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন। ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে ফিরতেই নিষিদ্ধ ভারতীয় আইসিএলে যান। এরপর বিসিবির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরেও টিকতে পারেননি।

রাকিবুল হাসান: ব্যাটিং টেকনিক, দারুণ ফুটওয়ার্ক এবং ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার হিসেবে রাকিবুল হাসানের জুড়ি মেলা ভার। দেশের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি তার। জাতীয় দলে ৫৫ ওয়ানডেতে প্রায় ২৮ গড়ে ১৩শ’ রান করেছেন। মিডল অর্ডারে সেই সময়ে তার গড়টা খারাপ বলার উপায় নেই। কিন্তু স্ট্রাইক রেট ছিল কম। ওয়ানডে থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভে তিনি অবসর নিয়ে নেন। এক সপ্তাহ পরেই আবার ফিরে আসেন। কিন্তু দলে তার জায়গা পাকা হয়নি।

তালহা জুবায়ের: একসঙ্গে দুই তরুণ গতিময় পেসার মাশরাফি ও তালহা জুবায়েরকে পেয়েছিল বাংলাদেশ। মাশরাফির এক বছর পরে ২০০২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক তার। অভিষেক টেস্টে গতি দিয়ে আতাপাতু-জয়বর্ধানেকে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। অল্প বয়সে জাতীয় দলের চাপ নিতে পারেননি জুবায়ের। টেস্ট ক্যারিয়ার দুই বছর, ওয়ানডে ক্যারিয়ার স্থায়ী হয় তিন বছর। ইনজুরিতে শেষ হয়ে গেছে কাঁচা ওই প্রতিভা।

তুষার ইমরান: প্রত্যেক দেশেরই ঘরোয়া ক্রিকেটের লিজেন্ড থাকে।  ইংল্যােন্ডর জ্যাক হবস, অস্ট্রেলিয়ার ড্যারেন লেহম্যান, ভারতের ওয়াসিম জাফর, পাকিস্তানের যেমন ফাহাদ আলম। তেমনি বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের লিজেন্ড তুষার ইমরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ১২ হাজার রান তার।অথচ জাতীয় দলের হয়ে ৫ টেস্ট ও ৪১ ওয়ানডে খেলেও পুরোপুরি ব্যর্থ তিনি।

শাহাদাত হোসেন: মাশরাফি, তাহলাদের পরপরই শাহাদাত হোসেনকে পেস আক্রমণে পাওয়া ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আর্শীবাদের মতো। কিন্তু ক্রিকেট ডিসিপ্লিন, বিতর্ক আর ইনজুরি তাকে প্রস্ফুটিত হতে দেয়নি। ২০০৫  থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দশ বছরে তাই খেলেছেন ৩৮টি টেস্ট। এর মধ্যেই ক্যারিয়ারে চারবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডে খেলেছেন ৫১টি। পেসার হিসেবে হয়তো একেবারে খারাপ বলা যাবে না। তবে শাহাদাতের দেওয়ার ছিল আরও অনেক।

এনামুল হক জুনিয়র: দেশের প্রথম টেস্ট জয় ও সিরিজ জয়ের অন্যতম নায়ক এনামুল হক জুনিয়র। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ধারা ধরে রাখতে পারেননি। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৫ টেস্ট ও ১০ ওয়ানডে।

আফতাব আহমেদ: একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা মাঠে কিংবা টিভির সামনে খেলা দেখতে বসতেন আফতাব আহমেদের জন্য।সে সময় ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারার সাহস সম্ভাবত তারই ছিল। সঙ্গে তার পার টাইম পেস বল দলকে বাড়তি সুবিধা দিত। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে তিনিও প্রতিভাবান কিছু ক্রিকেটারের মতো চলে যান নিষিদ্ধ টি-২০ লিগ আইসিএলে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরলেও স্বরূপে ফিরতে পারেনি তিনি।

জহুরুল ইসলাম অমি: সাতটি টেস্ট ও ১৪টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে থেমে গেছে জহুরুল ইসলাম অমির ক্যারিয়ার। খুঁজলে ওমন সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের ক্রিকেটার দেশের অঙ্গনে অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু যেকোন পরিস্থিতিতে তার মতো সোজা ব্যাটে খেলা ক্রিকেটার খুব কম পাওয়া যাবে। অমিকে নিয়ে তামিম একবার বলেছিলেন, অমি ভাই যখন নেটে বা অনুশীলনে ব্যাট করতেন, আমরা দেখতাম। কী দারুণ খেলতেন। কেন যে ওর হলো না! তার না হওয়াটা বাংলাদেশের জন্যও আক্ষেপের।

রবিউল ইসলাম: বাংলাদেশে যে ক’জন গতিময় পেস বোলার এসেছেন তাদের মধ্যে রবিউল অন্যতম। রাগের বশে অবসর ঘোষণা না করলে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ হতে পারতো। বিশেষ করে টেস্টে। রবিউল মনে করেন, তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি। নয় টেস্ট খেলে দু’বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৭৭টি।

জিয়াউর রহমান: একজন পেস অলরাউন্ডারের অভাব বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের। তরুণ সাইফউদ্দিন সেই অভাব মেটাবেন বলে প্রত্যাশা ভক্তদের। জিয়াউর রহমান শুরু করতে পারতেন দেশের সেই কাঙ্খিত পেস অলরাউন্ডারের যাত্রা। দীর্ঘদেহি, বড় শট খেলার সামর্থর সঙ্গে পেস বলটাও চালিয়ে নেওয়ার মতো। কিন্তু ১৩ ওয়ানডে ও ১৪ টেস্ট খেলে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। জিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন ২৬বছর বয়সে। আরও আগে তাকে তৈরি করতে পারলে হয়তো দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো।

Pin It