কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দেশের ই-কমার্স খাতে প্রতি মাসে ৬৬৬ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জনিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)। সংকট কাটিয়ে উঠতে ই-ক্যাব স্বল্প সুদে ঋণ, করপোরেট ট্যাক্স মওকুফের সুপারিশ জানিয়েছে।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংকটের এই সময়ে অনলাইন ব্যবসার গতি ঠিক রেখে জনসাধারণকে জরুরি পণ্যসেবা পৌঁছে দিতে গৃহিত পদক্ষেপ ও ই-কমার্সের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, “ই-কমার্স খাতে আগামীতে ৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এখন ই-কমার্সকে আলাদা খাত ঘোষণা করার সময় এসেছে কারণ, আমরা ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে।
“আমরা সবাই এসএমই, তাই কর্পোরেট ট্যাক্স মওকুফ করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা যদি প্রণোদনা নাও পাই তারপরও আমরা আগামী কয়েক বছরের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স মওকুফ চাই। করোনাকালীন সময়ে আমরা দুই শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ব্যাংক ঋণ চাই।”
লকডাউনে ই-কমার্স খাতের ক্ষয়ক্ষতির ওপর একটি প্রতিবেদন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য এক হাজার ১০০ জন। এ খাতে এক লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে, যার ২৬ শতাংশ নারী।
ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক আব্দুল হক বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিত্যপণ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারায় ই-কমার্স খাতে প্রতি মাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬৬৬ কোটি টাকা।”
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “দেশে ই-বাণিজ্য প্রসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ই-কমার্সের প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। চলমান পরিস্থিতিতে যারা কর্মহীন হয়েছেন, তাদের ই-কমার্সে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ই-কমার্সের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।”
ই-ক্যাবের উপদেষ্টা নাহিম রাজ্জাক বলেন, “অনলাইন ব্যবসার গতি ডিজিটাল পেমেন্টকে ত্বরান্বিত করবে এবং আমাদের আগামীদিনের ডিজিটাল অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হয়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের মত সবাই নিজেদের করনীয় সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের লক্ষ্যপূরণ সহজ হয়ে যাবে।”
বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেন, করোনা সংকটের শুরু থেকেই ই-ক্যাবের ডাকে সাড়া দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়েছে অন্যদিকে জনসাধারণ ও ডেলিভারি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ধাপে ধাপে অনুমতি দিয়েছে।
সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য ঋণ সুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত মন্তব্য করে প্রয়োজনে ঋণের শর্ত শিথিল করার আহ্বান জানান সচিব।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “ই-কমার্সের সম্ভাবনা আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে সহযোগিতা করে আরো বিকশিত করতে পারি। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই খাত। যারা এখনও প্রচলিত পন্থায় ব্যবসা করেন তাদের ই-কমার্সে আসার সময় হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আজম, ‘ই-বাণিজ্য করব নিজের ব্যবসা গড়ব’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।