করাচির একটি আবাসিক এলাকায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দুইজন বাদে সব আরোহী নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
লাহোর থেকে ছেড়ে আসা এয়ারবাস এ-৩২০ উড়োজাহাজে ৯১ যাত্রী ও ৮ ক্রু ছিলেন।
বিমানটি করাচির জিন্নাহ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে নামার কয়েকদফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কাছের একটি আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে।
ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু হলেও তা শুক্রবার সারারাত ধরে চলে বলে ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
শনিবার সকালে কর্মকর্তারা ৯৭ আরোহীর মৃত্যু ও দুইজনকে জীবিত উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেন। নিহতদের মধ্যে ১৯ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে সিন্ধুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে বিমানবন্দরের রানওয়ের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম ছিল।
উড়োজাহাজটি মডেল কলোনি নামে পরিচিত আবাসিক এলাকার যে বাড়িঘরগুলোর উপর বিধ্বস্ত হয়েছে, দুর্ঘটনায় সেখানকার ১১ বাসিন্দা আহত হয়েছেন বলে ডন জানিয়েছে। আহতরা সবাই স্থিতিশীল বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
বিমানটির জীবিত উদ্ধার দুই আরোহীর নাম জুবায়ের ও জাফর মাসুদ, জানিয়েছেন সিন্ধুর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গণমাধ্যম সমন্বয়ক মিরন ইউসুফ।
এর মধ্যে জুবায়েরের শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংক অব পাঞ্জাবের প্রেসিডেন্ট জাফর মাসুদের শরীরের চার জায়গায় হাড় ভেঙেছে। দুইজনকে আলাদা দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার উড়োজাহাজটি যে জায়গায় বিধ্বস্ত হয় সেখানকার ধ্বংসস্তূপের ছবি এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিও ও ছবিতে দুর্ঘটনার পরপরই আবাসিক এলাকাটির উপর কালো ধোঁয়া দেখা গেছে।
হতাহতদের উদ্ধারে জরুরি বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ঝাঁপিয়ে পড়েন। উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের এ ঘটনায় মডেল কলোনির বেশ কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পিআইএ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার কিছু পরে লাহোর থেকে করাচিগামী ফ্লাইট পিকে ৮৩০৩-র সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পাকিস্তান বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অবতরণের আগে আগে বিমানটির চাকা খুলছিল না বলে চালক নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানিয়েছিলেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এমনটি হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের মহামারীতে বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর পাকিস্তানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই এ দুর্ঘটনা ঘটল।
২০১০ সালে ইসলামাবাদে প্রাইভেট এয়ারলাইনস এয়ারব্লুর এক বিমান দুর্ঘটনায় ১৫২ যাত্রীর সবাই নিহত হন। পাকিস্তানের ইতিহাসে সেটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
এরপর ২০১২ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে বোয়িং ৭৩৭-২০০ দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটির ১২১ জন যাত্রী ও ৬ ক্রুর সবাই নিহত হন।
২০১৬ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ইসলামাবাদে যাওয়ার পথে তাতে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটে, নিহত হন ৪৭ জন।