হাজী মকবুলের মৃত্যুতে ব্যথিত তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা

789-samakal-5ecabbea651e8-samakal-5ecac150a056f

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী মকবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা। সাবেক এই এমপির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা বলেছেন, মাটি ও মানুষের নেতা হাজী মকবুল আমৃত্যু জনগণের কল্যাণের জন্যই কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যু দেশ ও রাজনীতির জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি।

রোববার রাত ৯টার কিছু সময় পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাজী মকবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঢাকার ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুর আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাতে এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন জনবান্ধব নেতা হিসেবে তিনি দল ও জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক শোক বিবৃতিতে হাজী মকবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

কথা হয় হাজী মকবুল হোসেনের কয়েকজন সহকর্মী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। তারা হাজী মকবুলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, হাজী মকবুল ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন তিনি। তিনি একজন নিষ্ঠাবান আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন, হাসপাতাল করেছেন, কলেজ করেছেন। গরিব-দুঃখী মানুষকে সাহায্যও করেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এমপি হয়েছিলেন। সব শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের বর্তমান এমপি ও হাজী মকবুলের ছেলে টিটু (টাঙ্গাইল-৬ আসনের এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু) সঙ্গেও কিছুক্ষণ আগে আমি কথা বলেছি। আমার খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, কেবল হাজী মকবুলই মারা যাননি, তার স্ত্রীও এখন এই মকবুল সাহেবেরই প্রতিষ্ঠিত ঢাকার তেজগাঁওয়ের এম এইচ শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সদা হাসিখুশি একজন মানুষ, যিনি কি-না সারাজীবন মানুষের কথা ভেবেছেন, তাদের কল্যাণের কথা ভেবেছেন- তিনি এইভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সত্যিই আমি মর্মাহত, দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছি। তার মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তার স্মৃতির প্রতি।’

সদ্যপ্রয়াত এই নেতার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হাজী মকবুল সাহেব আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং এদেশের একজন প্রথিতযশা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন তিনি। মোহাম্মদপুর-ধানমণ্ডির একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও এলাকার মানুষের নেতা হিসেবে হিসেবে এলাকার উন্নয়ন করেছেন তিনি। মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আওয়ামী লীগ একজন অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুর সৈনিককে হারালো। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, হাজী মকবুল হোসেন একজন সাহসী, সৎ, নির্ভীক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর সেই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য দুর্দিনের নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত একজন কর্মী হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পরে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনা পাশে থেকে কাজ করেছেন তিনি। আর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে, তিনি বিপদ-আপদে দুঃখী মানুষের পাশে সবসময়ই দাঁড়াতেন তিনি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বেচ্ছাসেবক লীগ পুনর্গঠনকালে প্রথম আহ্বায়ক হিসেবে হাজী মকবুলকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সেই পুনর্গঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এই নেতাকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করেছিলেন। সেখানেও দল ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আদর্শকে এগিয়ে নিতে ভুূমিকা রেখে আসছিলেন তিনি। কিন্তু অকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। যা দেশ ও দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনলো। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। সেই  সঙ্গে শোকসন্তুপ্ত  পরিবারের প্রতি সমবেদানা ও সংহতিও জানাচ্ছি।

Pin It