কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাতে নেওয়া প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে।
এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আংশিক অর্থায়নে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
আর ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপার্ডনেস’ প্রকল্পের আংশিক অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউন তুলে নেওয়ার পর মঙ্গলবারই একনেকের প্রথম বৈঠক বসছে।
গত এনইসি সভার মত একনেক বৈঠকেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে বৈঠকে অংশ নেবেন।
পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, এটাই হবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একনেকের প্রথম সভা। এর আগে গত মাসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সভা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “বৈঠকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতি নেওয়া দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পটি দুটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সেগুলো একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।”
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স (এডিবি-জিওবি)’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
এ প্রকল্পের এক হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মধ্যে এডিবি ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা, বাকি ৫১৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগানো হবে।
এর আওতায় চলমান কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য মহামারীর জন্য পিসিআরসহ আধুনিক মাইক্রো- বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।
রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং পদ্ধতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমিয়ে আনতে ‘কার্যকর ব্যবস্থা’ নেওয়াও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
প্রকল্পটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের তিন হাজার ৫০০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের যন্ত্রপাতি এবং পিপিই ও মাস্ক কেনার কাজেও এ প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হবে।
‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপার্ডনেস (বিশ্বব্যাংক- বাংলাদেশ সরকার)’ প্রকল্পের ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ৮৫০ কোটি টাকা। ২৭৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার যোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর বিস্তারের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, শনাক্তকরণ ও রোগ নির্ণয়ের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রস্তুতি বাড়ানো হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
কোভিড-১৯ এর জন্য ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এর ব্যাপ্তিও বাড়ানো হবে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।
এছাড়া সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংক্রমক রোগ বিভাগ চালু, জেলা পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ইউনিট সম্প্রচারণ এবং সব সেকন্ডারি ও টারশিয়ারি হাসাপাতলে ‘ইনফেকশন প্রিভেনশন ইউনিট’ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ দুটি প্রকল্পসহ মোট ১০টি প্রকল্প উপস্থান করার কথা রয়েছে মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে।