বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে এক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাদরাসার অফিস সহকারী ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরিয়েছেন দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। বুধবার (৩ জুন) বিকেলে ব্যক্তিকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানোর ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে হেনেস্তার শিকার শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযুক্ত দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাড়ি সহ নয়জনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।
অপরদিকে ঘৃনিত এই কাজের জন্য অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণাালয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. নাঈমুল হক জানান, বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জানান, একজনের গলায় জুতার মালা পড়ানো গর্হিত কাজ। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাড়িকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভিডিও বার্তায় লিজা: ‘এক কোটি টাকা লোন নিয়ে বাড়ি বানিয়েছি’
জানা গেছে, দড়িরচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার এক ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ওই মাদরাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং স্থানীয় স্টিমারঘাট সিকদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম আলাউদ্দিনকে গত বুধবার বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাড়ি। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফিরোজ, স্থানীয় গণ্যমান্য বজলু আকন, আবুল বয়াতী, মো. কামরুজ্জমান ও রিন্টু দেওয়ানসহ অন্যরা। শালিসে তাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করে ২০ হাজার টাকা মাফ করে বাকি ৫০ হাজার টাকা জন্য চাপ দেওয়া হয়। শহীদুল ইসলাম জরিমানার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধর করে তার গলায় প্রকাশ্যে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানো হয়। পরে তাকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানোর দৃশ্য উপস্থিত শালিসদারদের মধ্য থেকেই কেউ একজন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। বুধবার রাতের মধ্যে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়।
হেনেস্তার শিকার মো. শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা তিনি আত্মসাত করেননি। একজন অভিভাবক না আসায় ওই ছাত্রীর নামের পাশে তিনি তার ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। তিনি ওই টাকা উত্তোলন কিংবা আত্মসাৎ করেননি। অথচ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান তাকে জুতা দিয়ে পিটিয়ে গলায় জুতার মালা পড়িয়েছে। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।