কোভিড-১৯ মহামারীর আঁচ লেগেছে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে।
চলতি মাসেই জাপান থেকে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট দেশে পৌঁছানোর কথা থাকলেও মহামারীর কারণে তা আসছে না।
তবে মেট্রোরেল নির্মাণে অন্যান্য অংশে স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে যত দূর সম্ভব কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে।
আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কি না জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক শনিবার বলেন, “মেট্রোরেলের কাজ কখনও বন্ধ ছিল না। টার্গেট সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কি না এখনও বলা যাচ্ছে না।
“কোভিড-১৯ যদি এক মাস থাকে তাহলে কী করব, এক বছর থাকে তাহলে কী করব- এর উপরই বিষয়টি নির্ভর করছে।”
মেট্রোরেল নির্মাণে যে জনবল নিয়োগ করা হয়েছিল, তারা পুরোদমে কাজ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাস্তব পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করলে আগে যেখানে ১০০ জন কাজ করত সেখানে সে পরিমাণ কাজ করতে পারবে না- এটাই স্বাভাবিক।
“যেসব জায়গায় স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করা যাচ্ছে না সে সব জায়গায় কাজ করা সম্ভব নয়।”
মেট্রোরেল ২০২১ সালেই উদ্বোধন: কাদের
দেশের বাইরে থেকে মেট্রোরেল নির্মাণে যন্ত্রপাতি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে জানিয়ে এমএএন ছিদ্দিক বলেন, “বর্তমানে শিপমেন্ট বন্ধ আছে। ১৫ জুন থেকে শিপমেন্ট শুরু হবে। মেশিনারি তো রেডি, তৈরি শেষ। জাহাজে উঠলে চলে আসবে। জাপান থেকে রওনা দিলেও মধ্যে দুটি বন্দরে জ্বালানি নিতে হয় সেখানে ব্যারিয়ার হতে পারে। বাংলাদেশিদের জাপানে যাওয়া নিষেধ, এসব আন্তর্জাতিক বিষয়ও রয়েছে।
“বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে আসলে খুব দ্রুত কাজ শেষ হবে এবং কোভিড-১৯ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজটি করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করে যাব, যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি তা অর্জন করতে।”
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, মোট আটটি প্যাকেজে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়নের কাজ ২০১৮ সালের শুরুতেই শেষ হয়েছে।
অন্যান্য প্যকেজগুলোতে স্বাভাবিক অগ্রগতি হলেও রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্যাকেজের অগ্রগতি প্রায় থমকে রয়েছে। মে মাস নাগাদ এ প্যাকেজে অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা গত মার্চে ছিল ২৩ শতাংশ এবং এপ্রিলে সামান্য বেড়ে ২৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
যাত্রীবাহী কোচ (কারবডি) নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে জাপানে শুরু হয়েছে। গত ফেব্রয়ারিতে একটি মকআপ ট্রেনও উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট জাপানে নির্মাণ শেষ হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট দেশে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানি।
আরও চারটি ট্রেন সেট জাপানে নির্মাণ কাজ চলছে। প্রথম মেট্রো ট্রেন বাংলাদেশে পোঁছানোর পর ট্রায়াল রান শুরু করার কথা রয়েছে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের এমআরটি-৬ নামের এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ছিল ৪১ দশমিক ২৬ শতাংশ, মার্চে তা দাঁড়ায় ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ, এপ্রিলে ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ এবং মে নাগাদ অগ্রগতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত বছরের নভেম্বরে সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছিল।
প্রকল্পটি দুটি অংশ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথমটি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। এই অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি মে মাসে হয়েছে ৭১ দশমিক ১২ শতাংশ, যেখানে ফেব্রয়ারিতে ছিল ৬৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি মে মাসে হয়েছে ৩৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।