নতুন বাজেটে মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্যাট অব্যাহতি, হার হ্রাস, কিছু খাতে কর বৃদ্ধি ও সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন বাজেটে ‘অতিরিক্ত’ ১০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এবার ভ্যাটের উৎসে কর কর্তন ও রেয়াত ব্যবস্থা- এ দুটি খাতে বড় সংস্কার আনা হয়েছে। বকেয়া ভ্যাট আহরণেও আইন আরও কঠোর হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের অন্যতম উৎস ভ্যাটে মোট ১৭টি পরিবর্তন এনে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বাজেটে ভ্যাটে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই পুরোনো। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার মূলত ১৯৯১ সালের আইনে ফিরে গেল।
নতুন বাজেটে সিগারেট ও বিড়ির মূল্যস্তর বাড়ানো হয়। সঙ্গে জর্দার সম্পূরক শুল্ক্কও বাড়ানো হয়। ফলে এ খাত থেকে বর্তমানের চেয়ে চার হাজার কোটি টাকা বেশি কর আসবে। বর্তমানে এ খাতে সব মিলিয়ে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আহরণ হয়। এখন পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আহরণের দিক থেকে এটি সবচেয়ে বড় খাত।
এনবিআর সূত্র বলেছে, মোবাইল প্রবৃদ্ধিনির্ভর খাত। এ খাত থেকে সহজ উপায়ে কর আহরণ করা যায়। সে জন্য টকটাইমসহ সব মেবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক্ক বাড়ানো হয়। এতে করে মোবাইল সেবা থেকে বাড়তি আসতে পারে তিন হাজার কোটি টাকা।
উৎসে ভ্যাট আদায়ে সংস্কার : নতুন বাজেটে নিয়ম পরিবর্তন করে সংশ্নিষ্ট খাতগুলোতে চালানসহ ভ্যাট আদায়ের নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানে ভ্যাট পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই নিয়ম কার্যকর হলে উৎসে ভ্যাট আহরণ বর্তমানের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা বেশি হবে।
রেয়াত ব্যবস্থায় সংস্কার : নতুন বাজেটে ভ্যাট ফেরত (রেয়াত) দেওয়ার পদ্ধতিগত সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে পণ্য ও সেবার বিপরীতে ব্যবহূত উপকরণ/কাঁচামালের সবটুকুর ওপর ভিত্তি করে কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয় এবং তা ফেরত দেওয়া হয় অগ্রিম হিসেবে। কিন্তু নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, যতটুকু উপকরণ বা কাঁচামাল ব্যবহার করা হবে ঠিক ততটুকুর বিপরীতে রেয়াত দেওয়া হবে। এ জন্য প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় উপকরণ ব্যবহারের হিসাব দেখাতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধাপে ধাপে এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। তা না হলে রেয়াত পাবেন না।
এনবিআর সূত্র বলেছে, রেয়াত দেওয়ার এ পদ্ধতি কার্যকর হলে বছরে দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সাশ্রয় হবে। যদিও এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা ভ্যাট বিভাগের রয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। তারা যেমন হিসাব সংরক্ষণ করেন না, তেমনি ভ্যাটের চালানও রাখেন না। আর এসব বিষয় নিশ্চিত না হলে তাদের রেয়াত পাওয়া কঠিন হবে।
বকেয়া আদায়ে আইন কঠোর : এখন আবগারি শুল্ক্ক আহরণের বড় দুটি খাত হচ্ছে ব্যাংক আমানত ও বিমানের টিকিট বিক্রি। যদিও এসব থেকে ঠিকমতো ভ্যাট আহরণ হয় না। বিপুল রাজস্বও আটকে রয়েছে। নতুন বাজেটে এ সংক্রান্ত নিয়ম কঠোর করার প্রস্তাব এসেছে। বলা হচ্ছে, দাবিনামা জারি থেকে শুরু করে শুনানির সময় ৪৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। এরপর ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে পাওনা ভ্যাট পরিশোধের জন্য। তারপরও না দিলে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ভ্যাট কর্মকর্তাদের।