বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের অনুমতি নিয়ে আপাতত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন না। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বেগম জিয়ার চিকিৎসা ও তাকে লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাকে ভিত্তিহীন, অনাকাঙ্ক্ষিত বলে দাবি করেছে স্থায়ী কমিটি।
বৃহস্পতিবার রাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে লন্ডন থেকে সংযুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চেয়ারপারসনকে নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় অসত্য খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। তিনি লন্ডন যাবেন বলে বলা হচ্ছে। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানলাম না আর সেইসব মিডিয়ার লোকেরা জানল। এটা তার পরিবারের বিষয়। তবে পরিবার থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তা আমরা অবশ্যই জানব। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছু শুনিনি। জানিও না। তবে এটা তো ঠিক যে উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা ভালো নয় এবং তার উন্নত চিকিৎসা জরুরি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক সিনিয়র নেতা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার যে খবর বেরিয়েছে এটার কোনো সত্যতা নেই। বৈঠকে এই ‘ভিত্তিহীন’ খবর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর সেদিন গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠেন খালেদা জিয়া।
এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দরও গণমাধ্যমে প্রচারিত লন্ডন যাওয়ার খবর অস্বীকার করেছেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “ম্যাডাম ও তার পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবেন। কারণ মুক্তির উদ্দেশ্যই ছিল উন্নততর চিকিৎসা, সেটা তো সফল হয়নি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব তথা হিসাব-নিকাশের ওপর। সরকার চাইলে সব কিছু পারে। আমি মনে করি, ম্যাডাম যদি যেতে চান, তবে বিশেষ বিমানে করে তাকে যেতে দেওয়া উচিত। তবে তিনি যাবেন কি না, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
বৃহস্পতিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন। বৈঠকে দেশের করোনা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশনের নতুন খসড়া আইন ও সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন নতুন আইনের খসড়ায় এমন সব শর্তারোপ করছে যা রাজনৈতিক দলের পক্ষে পূরণ করা অসম্ভব। এ ধরনের বিধান অসাংবিধানিক। এটা মানুষের রাজনীতি করার অধিকার খর্বের শামিল। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটি একটি খসড়া আইন। এর ওপর সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত যে, আইনটি চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত ও বিধি-বিধানে কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে। এই খসড়া সম্পর্কে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানিয়েছে।