জার্মান দার্শনিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক বারটোল্ট ব্রেখট বলেছিলেন- ‘দুঃখের দিনে পাখিরা কি গান গাইবে? বিষাদের গান গাইবে’! পৃথিবী আজ বিষাদের গান গাইছে। বিশ্ব পুঁজিবাদ হঠাৎ ভয়ানক ধাক্কা খেয়েছে এক অজানা, অদৃশ্য কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান ক্ষুদ্র ভাইরাস নভেল করোনার কাছে। প্রায় অজানা করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীকে ষাবড়িয়ে তুলোধুনো করেছে, ধনী, দরিদ্র, সৎ, দুর্জন, দুর্নীতিপরায়ন রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, কৃষক জনতাকে। কারো পালাবার পথ নেই। করোনা ভাইরাস ছাত্র, শ্রমিক সবাইকে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। রাষ্ট্র ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে আসবে তো?
বাংলাদেশের কথা বলি। দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক কর্মী এবং গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ কৃষক শ্রমিকের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল অফুরন্ত ভালোবাসা। তার হৃদয়ের দরজা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া, কৃষক শ্রমিক সন্তানের শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল তার জীবনের ব্রত। সবাই ছিল তার একান্তজন, আত্মীয় তুল্য। যাকে একবার শেখ মুজিব দেখেছেন, তাকে তিনি স্মরণ রেখেছেন স্নেহডোরে। কেন্দ্রীকতা তাকে করাচী ও ইসলামাবাদের শাসনের কথা বারে বারে স্মরণ করিয়েছে নির্মমভাবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীকতা পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সম সুযোগ ও সম উন্নয়নের ছিল প্রধান বাঁধা ছিল কেন্দ্রীকতা, যানজট, শাসনজট ও সময় মত স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চনার নির্মম মাফিয়া শাসন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল কেন্দ্রীকতা, ধর্মের অপব্যবহার। কেন্দ্রীকতা দুর্নীতির সোপানও বটে। বঙ্গবন্ধু শহরের সকল সুযোগ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন গ্রামবাসী জন্য। সংগে নির্মল বাতাস ও লোকজ সংস্কৃৃতির বিস্তার।
তৃণমূলের অধিকার আদায় ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব জেলায় জেলা গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সনের ১৭ জুলাই মাসে। আগষ্ট মাস অবধি চলছিল গভর্নরদের প্রশিক্ষণ। তিনি বুঝেছিলেন, পূর্ব পকিস্তানে শিল্প নেই কিন্তু ব্যাপক কৃষি সম্ভাবনা আছে। আছে শিল্পের উৎপাদন সৃষ্টির, তাই কৃষি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার বাহন। পদ্ধতি হবে ইউরোপীয় সমবায় ব্যবস্থাপনা। মেজর খালেদ মোশাররফের ছোট ভাই রাশেদ মোশাররফকে ইউরোপে পাঠিয়ে ছিলেন সমবায় পদ্ধতি অবলোকন ও অধ্যয়নের জন্য। উদ্যোগ নিয়েছিলেন মৌলিক সংস্কারের যা আজও অসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর দর্শনের আলোকে কিছু পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।
কৃষিতে বিনিয়োগ
দ্রুত বিপদ মুক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি সরকারি বিনিয়োগ করতে হবে বেসরকারি কৃষি উৎপাদনে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তদারকীতে উদ্ধৃত্ত হয়ে ফিরে আসবে সকল বিনিয়োগ। ব্যাংক খেলাপীর ঝামেলায় ঘুম হারিয়ে যাবে না। কৃষককে বিশ্বাস করা যায়, তারা মিথ্যাচার কম করেন। তারা ধর্মে বিশ্বাসী ও নীতিবান, তাদের ক্ষুধা সীমিত। মৎস্য, পানি সম্পদ, পোলট্রি, স্বাস্থ্য সেবা, ডেইরি ও খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক বিনিয়োগ নিশ্চিত করুন নির্ভাবনায়। বাংলাদেশ ইনসটিটিউট অব ডেভেলফমেন্ট ষ্টাডিস ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ‘সজারু তদারকির’ মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে সঠিক নিবন্ধন, সঠিক কৃষককে সময় মত ঋণদান ও সময়মত দুর্নীতি মুক্ত ঋণপ্রাপ্তি। সংগে রাখুন এনজিওদের, তারা তৃণমূলে সম্পৃক্ত এবং পরিশ্রমী, ক্ষুদ্রঋণ দ্রুত প্রসার করে নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
জেলা স্টেট
মনে রাখতে হবে, বৃৃহত্তর জনসাধারণের কল্যাণই রাজনীতি। সঠিক সময়ে নির্ভয়ে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন নি:স্বার্থ রাজনৈতিক কর্মীকে মাথা উচু করে থাকা রাজনৈতিক নেতায় উন্নীত করে, ইতিহাসে স্থান করে দেয়। প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য প্রতিযোগিতামূলক, স্ব-নির্বাচিত, স্ব-শাসিত ৬৪ ‘জেলা ষ্টেট’ সৃষ্টির লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে কমিশন গঠন করুন। ৬৪ জন গভর্নর নিযুক্তি দিন তৃণমূল রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক- বিচারপতি, দানশীল ব্যবসায়ী, প্রখ্যাত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে। এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এতে কেন্দ্র ও জেলা ষ্টেটে প্রশাসনিক সামঞ্জস্য থাকবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দ্রুত উন্নয়ন হবে কিন্তু দুর্নীতি বহুলাংশে কমবে। সমঅধিকার ও সমসুযোগ সৃষ্টি হবে। জবাবদিহিতা থাকবে, সুখের পায়রার বকবকুম শুনতে হবে না। জন প্রতিনিধিদের সার্বক্ষনিকভাবে নিজ জেলা ষ্টেটে সপরিবারে অবস্থান হবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি কর্মকর্তাদের বেলাতেও এই নিয়ম কঠোর ভাবে প্রযোজ্য হবে। তাদের সন্তানদের স্ব স্ব জেলা ষ্টেটে অধ্যয়ন করতে হবে স্থানীয় কৃষক শ্রমিকের সন্তানদের সাথে একই বেঞ্চে বসে। দুই জায়গায় পরিবার রাখা মানে দুর্নীতিতে সজ্ঞানে অংশ গ্রহণ, কর্তব্যে অবহেলা ও স্থানীয় উন্নয়নে মনোযোগ না দেয়া। স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি প্রশাসন ক্যাডার সৃষ্টি বিবেচ্য হওয়া উচিত- ব্যাপক জেলা ষ্টেট ক্যাডার এবং সীমিত কেন্দ্রীয় প্রশাসন ক্যাডার। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্রনীতি, আকাশ সমুদ্রপথ, আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা, আয়কর ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। পুলিশ হবে জেলা ষ্টেট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কোটা নয় প্রতিযোগিতাই হবে প্রশাসনে প্রবেশ পথ। বয়স সময়সীমা অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বয়স সীমা বিবেচ্য হতে পারে, অন্যত্র নয়। সকল কর্মচারী কর্মকর্তাদের অবশ্যই ধূমপান, পানসেবন ও মাদকাসক্তি মুক্ত হতে হবে, এগুলো দুর্নীতির প্রথম ধাপ। সকলের আয়কর তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
স্থানীয় শিক্ষিতদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে জেলা প্রশাসনে, কৃষি উৎপাদন সমবায়ে এবং কৃষি বাজারজাত সমবায়ে। বহু দলীয় গণতন্ত্রের বিকাশ হবে। কমিউনিষ্ট ও বাম রাজনৈতিক নেতারা তাদের ত্যাগ তিতিক্ষার পুরস্কার অর্জন করতে পারবেন কোন না কোন জেলা ষ্টেটে। তাদের শাসনের ধরন নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে। নির্মল পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা সংস্কৃতির নতুন শহর গড়ে উঠবে জেলা ষ্টেটে কেন্দ্রীয় রাজধানী ঢাকার সম মানের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, সংগে মুক্ত চিন্তার সংস্কৃতি ও বৈচিত্রময় লোকশিল্প নিয়ে। শান্তির দ্বীপ হবে সব জেলা ষ্টেট, সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীর জীবন যাত্রা হবে নিরন্তর নিরাপদ ও আনন্দময় এবং সম্পত্তিতে সমান অধিকার। জনসংখ্যা ভেদে প্রতি ‘জেলা সংসদে’ ৪০ থেকে ৮০ জন বিধায়ক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সর্বোচ্চ ১০ জনের মন্ত্রীসভা, প্রশাসন শীর্ষে গভর্নর। কেন্দ্র নিয়োগ দেবে জেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের জেলা ষ্টেটের সিভিল সার্জনের পরামর্শে, কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের সকল চিকিৎসক, সেবিকা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের নিয়োগ উন্নয়ন নির্ধারণ করবেন জেলা ষ্টেট কর্তৃপক্ষ।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সুবিধা ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা অসম্পূর্ণ ও অকল্পনীয়। করোনা প্রতিরোধে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মূল ভূমিকা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকারা মূল সেনানী। এখানে বিনিয়োগ হবে অর্থবহ এবং অবশ্য প্রয়োজনীয়। কেবল যন্ত্রপতি ক্রয় নয়, যন্ত্রপাতির সহায়তায় সময়মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানই লক্ষ্য। চিকিৎসক ও সেবিকাদের জ্ঞান ও সেবার উন্নয়ন হবে করোনা ও অন্যান্য মহামারী থেকে আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্র।
আগামী ১০-১৫ বৎসরে একটি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা পৌছবে ৫০ থেকে ৭০ হাজারে। জনগনের চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ৬ ফুট উচু, ৮০০ অধিক রানিং ফুটের নিরাপত্তা বেষ্টনী, গভীর নলকূপ ও ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা। সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালকের জন্য এক হাজার বর্গফুটের বিনা ভাড়ায় পারিবারিক বাসস্থান। মেট্রন, একজন দন্ত চিকিৎসক, একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট, একজন ফার্মাসিষ্ট, দুইজন নবীন চিকিৎসক ও দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য ৬০০ বর্গফুটের ৮টি ফ্রি বাসস্থান। মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপী ছাত্র ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, বিনোদন কক্ষ, ডাইনিং রুম, টয়লেট সুবিধাসমেত ৪৫০০ বর্গফুটের ডরমিটরি। ২০ শয্যার ইনডোর হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজী, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ছোট অপারেশন কক্ষ বাবদ পাঁচ হাজার বর্গফুট স্থাপনা হবে জনগণকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য সুবিধা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ।
যে সব চিকিৎসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে সম্ভব হবে না সেগুলো রেফার হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসকগণ কমিউনিটি ক্লিনিকেও প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মী ও ধাইদের ক্রমাগত আধুনিক চিকিৎসা তথ্য জ্ঞাত করাবেন। তদোপরি তারা মেডিকেল ও অন্যান্য ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পালন করবেন যার জন্য একটা শিক্ষকতা ভাতা পাবেন। তিন মাস মেয়াদী কোন একটা সার্টিফিকেট অধ্যয়ন ও পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদে উন্নীত হবেন। কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাতা পাবেন। বিনা ভাড়ায় বাসস্থান সুবিধা পাবেন। গ্রামবাসীদের নিরন্তর চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য চিকিৎসকদের জন্য জনগনের পুরস্কার।
সকল সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও নাসিং কলেজ এক বা একাধিক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত হবে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা প্রদানের অংশ হিসাবে। ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধ ও দরিদ্র শ্রেণির সাথে পরিচিতি দেশপ্রেমের অংশ এবং শিক্ষাদানের প্রধান হাতিয়ার।
স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য সংস্কার
প্রায় এক লাখ ব্যক্তি কারাবন্দী আছেন। জেল হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া এবং চিকিৎসক স্বল্পতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলা ব্যবসায়ীদের, ভরসা সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল সিএমএইচ, সকল কারাগার, পুলিশ, অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী, আনসার ও বর্ডার গার্ড, হাসপাতালসমূহ সরাসরি আর্মি মেডিকেল কর্পস বা এএমসি কর্তৃক পরিচালিত হলে শৃংখলা ফিরে আসবে, চিকিৎসকের অভাব হবে না। এএমসি হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সকল চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানদের পদবি হবে সামরিক বাহিনীর এএমসি’র। তারা সুযোগ সুবিধা বেশি পাবেন। তাই তাদের কাজে থাকবে প্রশান্তি ও আনন্দ এবং সময়মত পেশাতে অগ্রগতি।
বেসামরিক অনেক সরকারি হাসপাতাল বর্তমানে সুষ্টুভাবে পরিচালিত হচ্ছে এএমসি চিকিৎসকদের দ্বারা। আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল সদস্য ও পরিবার বর্গ সামরিক বাহিনীর সমান সুযোগ পাবেন। সামরিক বাহিনীর মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নরতরা এমবিবিএস পাশ করে পাঁচ বৎসর এএমসিতে চাকরি করতে বাধ্য থাকবেন, নতুবা ক্ষতিপূরণ দেবেন ত্রিশ লাখ টাকা।
জেনারেল প্রাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতি
ঢাকা শহরে ১০০ ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে জেনারেল প্রাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতির জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। দুই কোটি নগরবাসীর জন্য খুব বেশী বরাদ্দ নয়। ঢাকা শহরের সকল জেনারেল প্রাকটিশনার্স সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে লিপিবদ্ধ নাগরিকরা বিনা ফিতে পরামর্শের পাশাপাশি ইসিজি, আম্বুবেগ, অক্সিজেন-পালস অক্সিমিটার ও নেবুলাইজার সুবিধা, ফার্মেসি, ছোট ল্যাব, এএনসি-পিএনসি ও ফিজিওথেরাপী সুবিধা পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত থাকছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও হোমভিজিট এবং প্রেসক্রিপশন অডিট ব্যবস্থাপনা। অতিরিক্ত ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অপচয় বটে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে।
রোগীরা ন্যায্য মূল্যে সরকারি ওষুধ কোম্পানি ইডিসিএলের সকল ওষুধ পাবেন অল্প খরচে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সকল রোগী বিনা ফিতে চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন, বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন সরকার নির্ধারিত একটা ন্যায্য ফি’তে। কেবলমাত্র জিপি চিকিৎসকগণ রোগীদের নির্দিষ্ট হাসপাতালে অধিকতর চিকিৎসার জন্য রেফার করতে পারবেন, রোগীর হয়রানি কমবে। জিপি এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পেশা সংক্রান্ত সম্পর্ক গভীর হবে। হোম ভিজিট করলে জিপি অতিরিক্ত ফি পাবেন এবং বয়োবৃদ্ধের চিকিৎসা সেবার সুবিধা হবে। ফলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় ভিড় কমবে।
কতক জেনারেল প্রাকটিশনার্স নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করতে পারবেন আনন্দের সাথে, পাবেন শিক্ষকতা ভাতা। সাথে তার পছন্দ মত বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ করে, পরীক্ষায় পাশ করে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদও পাবেন, সঙ্গে আনুমানিক ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ভাতা।
পুষ্টি ব্যতীত স্বাস্থ্য অকল্পনীয়
দেশে দুই কোটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে করোনা উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ছয় মাস ফ্রি রেশন দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। ৪-৬ জনের পরিবারের জন্য প্রতিমাসে চাল ২০ কেজি, আটা ৫ কেজি, আলু ১০ কেজি, সরিষার তৈল ১ লিটার, সয়াবিন তৈল ১ লিটার, পিয়াজ ১ কেজি, মশুর ডাল ২ কেজি, আদা ২০০ গ্রাম, রসুন ২০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ২০০ গ্রাম, লবন আধা কেজি, চিনি আধা কেজি ও সাবান ২ টিসহ মোট খাদ্য প্যাকেট ব্যয় হবে অনধিক দুই হাজার টাকা। ফ্রি খাদ্য রেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক ব্যয় মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। খাদ্য গুদামে স্থান বাড়বে যা কৃষকের শস্য উৎপাদনে আকর্ষণ বাড়াবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিমাসে প্রতি পরিবারকে আরও দিতে হবে দুই কৌটায় দুইশত আয়রন টেবলেট, ৬০ মিলিলিটারের এক বোতল পারাসিটামল সাসপেনশন, ৩০টি ৫০০ মিলিগ্রামের পারাসিটামল টেবলেট, ১০০ মিলিটার ক্লোরহেক্সাডিন এবং ৫ টি ওআরএস সাসেটস। এতে ব্যয় হবে মাসে অনধিক দুই শত টাকা। সঙ্গে উঠানে সবজী চাষে সহযোগিতা। গর্ভবর্তী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সপ্তাহে একবার দুধ, ডিম খাবার সুবিধার জন্য মাসে ৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা দেয়া কাম্য হবে। স্মরণ রাখতে হবে নগদ অনুদান অধিকতর দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং নগদ অনুদানের পরিমান যথাসাধ্য কম রাখতে হবে। খাদ্য সহযোগিতা বাড়ি বাড়ি পৌছে দিতে হবে, সর্বদলীয় রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র ও এনজিওদের সহায়তায়। সঙ্গে থাকবেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাসে নতুন সিনিয়র সচিব আর নয়। যে কোন আমলাকে চাকরিতে এক্সটেনশন দেয়া অনভিপ্রেত। পাশপাশি সরকারি কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি ও কর্পোরেট কর্মকর্তাদের সাময়িক বেতন হ্রাস করতে হবে। ইনসপেক্টর থেকে আইজিপি, ক্যাপ্টেন থেকে জেনারেল, সেকসন অফিসার েেথকে সিনিয়র সচিব, লেকচারার থেকে উপাচার্য, করপোরেট কর্মকর্তা, ব্যাংকার, বিচারক থেকে বিচারপতি, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের আগামী এক বৎসর ২০% বেতন ও ভাতা হ্রাস করা যেতে পারে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে। পাশাাপাশি বিদেশে সরকারি অর্থে চিকিৎসা সুবিধা রহিত করতে হবে। সরকারি অর্থায়নে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না কেউই। সবাইকে নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফি ২৫% হ্রাস করা যেতে পারে। তবে ব্যয় হ্রাসের অজুহাতে কোন শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না।
রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি
দেশে বর্তমানে মাত্র ২২ লাখ ব্যক্তি আয়কর নিবন্ধিত আছেন। এটা হতে হবে কমপক্ষে ১ কোটি। ফেরিওয়ালা, নিরাপত্তা প্রহরী. চাওয়ালা, ছোট দোকানদার, ভ্যান চালক, রিকশা চালক, কার ড্রাইভার, বেবী ট্রাক্সি ড্রাইভার ও ফুটপাতের ফলও হোটেল মালিক,সিগারেটের দোকানদার, সবজিওয়ালা, সরকারী বেসরকারি নিম্নশ্রেণির কর্মচারি, কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষক, অনভিপ্রেত কোচিং সেন্টার মালিক সবাইকে নিবন্ধিত হতে হবে। গৃহকর্মীদেরও নিবন্ধিত হতে হবে তবে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন ফি দেবেন গৃহকত্রীরা। বাৎসরিক নিবন্ধন ফি এক হাজার টাকার, বিনিময়ে পাবেন পুলিশের হয়রানী থেকে রক্ষা এবং ব্যাংক, স্বাস্থ্য, শিক্ষাও জেনারেল প্রাকটিশনার্স পরামর্শ ও ফ্রি স্বাস্থ্য সুবিধা, কতক ওষুধ ও বড় হাসপাতালে পূর্বাহ্নে নিদ্ধারিত রেফারেল সুবিধা।
যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স
দেশে প্রায় ৪৪ লক্ষ যানবাহন আছে। তন্মধ্যে ৫০ হাজার বাস, ১ লাখ ৫৩ হাজার ট্রাক, তিন লাখ অটো রিকশা, প্রায় দেড় লাখ কভারড ও উন্মুক্ত ভ্যান এবং পিকআপ, ত্রিশ লাখ মোটর সাইকেল, জীপ ৬৫ হাজার, মাইক্রো ও মিনিবাস ১ লাখ ৩৫ হাজার, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার ৩ লাখ ৬০ হাজার। সামরিক যানবাহন হিসাব প্রকাশ্য জ্ঞাত নয়। সকল সরকারী বেসরকারি মোটরযান ও মোটর সাইকেলের গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়াতে হবে। বাৎসরিক রোড ট্যাক্স হওয়া উচিত ন্যূনতম ১ লাখ টাকা। তবে মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যাপ্ত। সরকারি বেসরকারি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি বাঞ্ছনীয় নয়। আইনশৃংখলা ও সামরিক বাহিনীর সকল যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং রোড ট্যাক্স হবে বেসামরিক যানবাহনের সমতুল্য। কৃষি যানবাহন, ট্রাকটর রেজিষ্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্সে আওতায় আসবে। সকল সরকারি, বেসরকারি কোম্পানির প্রত্যেক যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন ফি প্রতি পাঁচ বৎসরে এক লাখ টাকার অনধিক হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে না, সমহারে বাৎসরিক রোড ট্যাক্স বাড়বে। পরিবার দ্বিতীয় গাড়ী ব্যবহার করলে দ্বিতীয় মোটর যানের রেজিস্ট্রেশন ফি ও রোড ট্যাক্স হবে, প্রথম গাড়ীর দ্বিগুন।
পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সপ্তাহের একদিন সকল প্রাইভেট গাড়ীর চলাচল বন্ধ রাখার চেষ্টা করা উচিত। পাবলিক ট্রান্সপোট ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। ছাত্ররা অর্ধেক ভাড়ায় ও মাসিক পাশে এবং বয়োবৃদ্ধরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন বিনা ভাড়ায় দুপুর ১ টা থেকে বিকেল তিনটা অবধি। নগর পিতারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, প্রত্যেক ট্রান্সপোর্ট মালিক তার গাড়ী নগর পুলে যুক্ত করবেন, তার দায়িত্ব শেষ। সমান পরিমান লাভ পাবেন, তাদের বিনিয়োগ আয়করমুক্ত। নারী ড্রাইভার হবে নারী নির্যাতন রোধের প্রধান প্রতিষেধক। অহেতুক প্রতিযোগিতা না থাকায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলবে সকাল ৬টা থেকে সারা রাত্রি, তবে রাতের ফ্রিকোয়েন্সী প্রতি ঘন্টায় একবার, কিন্তু দিনের বেলায় প্রতি পনের মিনিট পরপর।
কোর্ট ফি বাড়ালে নৈরাজ্য কমাবে
আদালত ঘিরে নৈরাজ্যে লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। ন্যূনতম কোর্ট ফি উচিত হবে পাচ হাজার টাকা। তিন বারের অতিরিক্ত প্রতিবার সময় প্রার্থনার জন্য বাধ্যতামূলক ফি হবে পাচ হাজার টাকা। শাস্তিমূলক কোর্ট ফি জমা দেবার পর নতুন তারিখ পাবেন। এক বৎসরের মধ্যে সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে প্রতিবার ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সরকার পাবেন ৫০% এবং প্রতিপক্ষ পাবেন ৫০%। এতে অনাকাঙ্খিত মামলা কমবে।
ফৌজদারি মানহানি মামলার ন্যূনতম কোর্ট ফি হবে ২০ হাজার টাকা। সিভিল মানহানি মামলার কোর্ট ফি হবে দাবী অনুসারে, যত বেশি ক্ষতিপূরণ দাবী করবেন তত বেশি কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। তবে ৫০ হাজার টাকার কম দাবি করা চলবে না। অগ্রীম কোর্ট ফি জমা না দিলে পুলিশ মামলা লিপিবদ্ধ করবে না। অভিযোগকারী হারলে সব টাকা হারাবেন। ঠুনকো মানে অভিমানের অবকাশ নেই। অযথা হয়রানি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেবলমাত্র মানহানি মামলার কোর্ট ফি জমা দেবার পর থানা মামলা লিপিবদ্ধ করবে, তৎপূর্বে নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হারলে মামলাকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ন্যূনতম এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ও ক্ষমা চাইতে বাধ্য থাকবেন। কোর্ট ক্ষতিপূরণের ৫০% পাবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি পাবেন ৫০%।
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং তা হবে তার জন্মশত বার্ষিকীতে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধার্ঘ। জয় হোক জনতার। (সংক্ষেপিত)
ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী , লেখক: ট্রাস্ট্রি, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র