কোভিড-১৯ মহামারীতে সঙ্কটে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোজার ঈদে যে আড়াই হাজার টাকা উপহার দিয়েছিলেন, তা যারা পাননি, তাদের হাতে সেই অর্থ পৌঁছাতে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার একটি সার্কুলার দিয়েছে, যাতে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খুলে ওই অর্থ পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
>> যে সব উপকারভোগীদের মোবাইল ফোন নেই অথবা যাদের পক্ষে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস হিসাব খোলা সম্ভব নয়, তাদের অনুকূলে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের তথ্যের এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যয়নের ভিত্তিতে ১০ টাকা আমানত সম্বলিত ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> চেক বই না থাকলে ডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে উপকারভোগীকে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> তবে কোনো উপকারভোগী পূর্ব হতে কোনো ব্যাংকের হিসাবধারী হলে তার অনুকূলে নতুন করে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রয়োজন নেই।
সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, “৫০ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের যে তালিকা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যাদের এমএফএস হিসাব খোলা সম্ভব নয়, তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে প্রকৃত উপকারভোগীর কাছে দ্রুত টাকা পৌঁছে যাবে।”
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ দেশ ‘লকড ডাউন’ হলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার সঙ্কট দেখা দেয়।
এই অবস্থায় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ রোজার ঈদের আগেই ওই টাকা সবার হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তা পড়ে নানা জটিলতায়।
দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার এখনও পায়নি
নগদ সহায়তা দিতে যে ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা হয়েছিল, তার তিন ভাগের দুই ভাগ পরিবার এখনও পায়নি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে ১৭ লাখ, বিকাশের মাধ্যমে ১৫ লাখ, রকেটের মাধ্যমে ১০ লাখ এবং শিওরক্যাশের মাধ্যমে ৮ লাখ পরিবারের কাছে এই টাকা পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত রোববার (৫ জুলাই) পর্যন্ত নগদ ৬ লাখ ৩২ হাজার পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছে। বিকাশ পৌঁছে দিয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার পরিবারের কাছে। আর রকেট ও শিওরক্যাশ পৌঁছে দিয়েছে যথাক্রমে ৩ লাখ ১৫ হাজার ও ২ লাখ ৫ হাজার পরিবারের কাছে।
অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ পরিবারের কাছে এই নগদ টাকা পৌঁছেছে। সোমবার টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৯০ হাজারের তালিকা পাঠানো হয়েছে চারটি মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) কাছে।
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক সোমবার প্রশ্নে বলেন, “এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো দোষ নেই।
“আমাদের কাছে তালিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তালিকা ধরে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আসলে তালিকা আসতেই দেরি হয়েছে।”
প্রথমে তালিকা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় পরে তালিকা যাচাই-বাছাই করে ‘প্রকৃত দরিদ্র’ মানুষকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসিকে।
বিটিআরসির এই তালিকা অনুযায়ী এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা পৌঁছে দিচ্ছে প্রকৃত সুবিধাভোগীর হাতে।
তালিকা নিয়ে জটিলতার কারণে পরে পুরো কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেখভাল করছে। সেখান থেকে চারটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে নতুন গাইডলাইনও দেওয়া হয়।
তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডেটাবেজ থেকে এনআইডি/স্মার্ট আইডি পরীক্ষা করে এমএফএসগুলোকে সুবিধাভোগীর হাতে টাকা দিতে হবে।
যারা সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা পান, যেমন- বেদে, গৃহিণী, হিজড়া, পথ শিশু, স্বামী পরিত্যক্তা, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, ইমাম, চা শ্রমিক, বস্তিবাসী, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, বেকার- এরা প্রধানমন্ত্রীর এই ‘ঈদ উপহার’পাবে না।
৫০ লাখ পরিবারকে এই নগদ সহায়তা দিতে সরকার ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরে এই নগদ সহায়তার সুবিধা পাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ।