চার খুনের ঘটনায় থমথমে মশিয়ালি গ্রাম, আ’লীগ নেতা বহিষ্কার

khulna-samakal-5f11bcff0cc04

গুলিতে ৩ জন ও গণপিটুনিতে ১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালি গ্রামে। ৩ জনকে গুলি করে হত্যা ও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ করেছে গ্রামবাসী। এ ঘটনায় খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক শেখ জাকারিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে যশোরের অভয়নগর থেকে মহানগর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি শেখ জাফরিনের সহযোগী জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে।

গ্রামবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মশিয়ালি গ্রামের মুজিবরকে অস্ত্র ও গুলিসহ পুলিশে ধরিয়ে দেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাফরিন। নিরাপরাধ মুজিবরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে রাত ৯টার দিকে জাফরিনের বাড়ি ঘেরাও করে। তখন জাফরিন, তার ভাই জাকারিয়া, মিল্টন ও কবীর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ নজরুল ইসলাম ও গোলাম রসুল শেখ রাতে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সাইফুল ইসলাম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। গুলিবিদ্ধ আফসার শেখ, শামীম শেখ, রবিউল শেখ, ইব্রাহিম খলিল, জুয়েল শেখ, রানা শেখ ও সুজন শেখকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে আফসার শেখের অবস্থা আশংকাজনক। তার বুকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী লাঠি, কুড়াল, শাবল ও দা হাতে বেরিয়ে আসেন। তারা জাফরিন, জাকারিয়া, কবীর ও মিল্টনের বাড়ি এবং আত্মীয়-স্বজনদের ১০টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আগেই বাড়ির সবাই বেরিয়ে আত্মগোপন করে। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট গেলে গ্রামবাসীর বাধার মুখে সেগুলো গ্রামে ঢুকতে পারেনি। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীকে নিবৃত্ত করেনি। রাত ২টার দিকে গ্রামবাসী জাফরিনের চাচাতো ভাই জিহাদকে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে শুক্রবার ভোর থেকে আবারও গ্রামবাসী রাস্তায় নেমে আসে। তারা ৩ জনকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও স্লোগান দেয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ খুলনা-যশোর মহাসড়কে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসে থাকলেও তারা গ্রামে ঢোকেনি।

সকালে গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া জাকারিয়া ও জাফরিনের বাড়ি হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলছে উত্তেজিত গ্রামবাসী। মিল্টনের বাড়ি থেকে গ্রিল খুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়া জাফরিন-জাকিরদের পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায় গ্রামবাসী। ছবি তোলার সময় গ্রামবাসী সাংবাদিকদের বাধা দেয় ও দুর্ব্যবহার করে।

দুপুর ১২টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ একসঙ্গে গ্রামে ঢোকে। তখন নিহতদের পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ধরে এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেয়। এছাড়া তারা নিরাপরাধ মুজিবরকে আটকের ঘটনায় খানজাহান আলী থানার ওসির শাস্তির দাবি জানান।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জাফরিনের সহযোগী জাহাঙ্গীরকে শুক্রবার সকালে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। জাফরিন ও জাকারিয়াসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। মুজিবরকে আটকের ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মুজিবরকে তাদের জিম্মায় জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন জানিয়েছেন, মশিয়ালি গ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ জাকারিয়া জাকারকে দলের সহ-প্রচার সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী জানায়, জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ট ছিল। জাফরিন গ্রামের মেয়েদের উত্যক্ত করতো। তারা ৩ ভাই সুদের ব্যবসা করতো। কেউ সুদের টাকা ফেরত দিতে দেরি করলে মারধর করতো।

তারা অভিযোগ করেন, শেখ জাকারিয়া প্রভাব খাটিয়ে মশিয়ালি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে চেয়েছিল। জাকারিয়ার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ কয়েকজন বিরোধিতা করায় তার ভাই জাফরিন মুজিবরকে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পাটকল শ্রমিক নেতা সরদার আবদুল হামিদ বলেন, জাকারিয়া-জাফরিনদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট ছিল। এতোদিন মানুষ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। কিন্তু ৩ জনকে হত্যার পর গ্রামের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত নিহত ৩ জনের মরদেহ দাফন করা হবে না।

Pin It