র্যাবের র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ এর আগে বলেছিলেন, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ৯ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সরকার কর্তৃক র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন না থাকলেও তারা সেটা করেছে। পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে। করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দিয়েছে।
হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর আগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তা নবায়ন করা হয়নি বলেও র্যাবের অভিযোগ।
এছাড়া হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে ১০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী-ওষুধ পাওয়ার কথাও জানিয়েছে র্যাব।
তবে র্যাবের তোলা নানা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেছে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট ব্যবহার নিয়ে তারা বলছে, এটা চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তার দায় তাদের উপর বর্তায় না।
র্যাব বন্ধ করে দেওয়ার পর রোগীদের চলে যাওয়ার মধ্যে সোমবার বিকালে হাসপাতাল চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাফর উল্লাহ।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হচ্ছে, এগুলো ঠিক নয়। তবে ফার্মেসির ক্ষেত্রে একটা ত্রুটি ছিল। লাইসেন্স আপডেট ছিল না।
তিনি জানান, গত ২ জুন থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করেন তারা। পরে কোভিড- ১৯ ইউনিট চালু হয়।
করোনাভাইরাসের ২২০ জন রোগী সাহাবউদ্দিনে ভর্তি হয়েছিলেন জানিয়ে ডা. জাফর বলেন, এর মধ্যে ১৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অন্য স্থানে পরীক্ষা করিয়ে আসার পর ‘পজিটিভ’ রোগীদের এখানে ভর্তি করা হত বলে জানান তিনি।
অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগে রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব।
অধ্যক্ষ বলেন, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড- ১৯ পরীক্ষার অনুমোদন পেলেও পিসিআর মেশিন সময়মতো দেশে না আসায় তাদের অনুমোদন স্থগিত করা হয়।
তিনি জানান, তাদের এখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হত না। তারা প্রাভা হেলথ কেয়ার ও ইন্টান্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে চুক্তির ভিত্তিতে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে আনতেন।
পরীক্ষার প্রতিবেদন সাহাবউদ্দিনের প্যাডে দেওয়ার বিষয়ে ডা. জাফর বলেন, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী তা করা হত।
তবে প্রাভা হেলথ কেয়ারের পরিচালক ডা. শিমিন এম আকতার জিজ্ঞাসায় বলেন, চুক্তিতে এমন কিছু ছিল না।
“যদি তারা তা করে থাকে, তারা এটা ঠিক করেনি।”
তিনি জানান, গত ২৫ জুন চুক্তি সইয়ের পর ওই মাসে ২-৩ জনের নমুনা পাঠিয়েছিল সাহাবউদ্দিন মেডিকেল, জুলাই মাসে মাত্র একজনের নমুনা পাঠিয়েছে।
গণস্বাস্থ্যে র্যাপিড কিট ব্যবহারের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসকের দিকে ইঙ্গিত করে কলেজ অধ্যক্ষ জাফর উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গণস্বাস্থ্যের কিট ব্যবহার যিনি করেছেন, এটা তার দায় তাকেই নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেবে না।”
রোববার গ্রেপ্তারের সময় ডা. হাসনাত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা প্লাজমা দিচ্ছেন, শুধু তাদের নিয়ে কাজ করেছিলেন তারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের র্যাপিড টেস্ট কিট তারা নিজেরাই এনে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করছিলেন।
অধ্যক্ষ জাফর উল্লাহ বলেন, “এ বিষয়ে হাসপাতাল বা কলেজ অবগত নয়। এটা আমাদের আওতার মধ্যে না। এটা কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে করে থাকে, এটাও আমাদের অনুমোদিত না।”
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর হুঁশিয়ারি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কোনো চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে ‘অযাচিত’ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন।
সাহাবউদ্দিন থেকে এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের পর সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে ‘অযাচিতভাবে’ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকির পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই চিকিৎসক, নার্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি ও অযথা হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হয়।
“কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তা প্রচলিত আইনের মা্ধ্যমে তদন্ত করে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।”
সোমবার সকালে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিকালে এই বিজ্ঞপ্তি দেয় বলে সংগঠনের সভাপতি মবিন খান জানান।
তিনি বলেন, “কেউ অন্যায্য করে থাকলে আর এটা প্রমাণিত হলে তার পাশে তারা থাকবেন না।
তিনি বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
সাহাবউদ্দিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল এই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য।
সাহাবউদ্দিন এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে ২০১৯ সালে তিনি পদত্যাগ করে বিএনপি ছাড়েন।