টাইটানিক। গ্রিক পুরাণের শক্তিশালী দেবতা টাইটানের নামানুসারে জাহাজের নাম রাখা হয় ‘টাইটানিক’। তৎকালীন সবচেয়ে বড় ও বিলাসী যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল ওটা।
টাইটানিক নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেন মনে করিয়ে দেয় জাহাজটা আসলে ডোবেনি। অন্তত মানুষের হৃদয়ে সে ভেসে বেড়াচ্ছে অবিরত। বিজ্ঞান দিয়ে যদি সবাইকে চমকে দিতে চাও তাহলে তোমরা জাদুর জাহাজ টাইটানিক খেলাটা রপ্ত করে প্রদর্শন করতে পারো।
সেজন্য সহজে জাহাজ বানাতে শেখো। যা কিছু দরকার তার সব কিছুই তোমাদের হাতের কাছে রয়েছে। মানে এ খেলার সামগ্রিক উপকরণগুলো বেসিনের পাশেই থাকে। যেমন প্লাস্টিকের পুরাতন ফেলনা বোতল, টুথপিক আর ডিটারজেন্ট, লিকুইড সাবান ইত্যাদি। এছাড়া আরও সংগ্রহ করতে পারো আর্ট পেপার, ইনডেক্স কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড। আর লাগবে স্কচ টেইপ। বৈদ্যুতিক ওয়াটার প্রুফ টেইপ জোগাড় করতে পারলে আরও ভালো হয়।
কেমন করে বানাতে হবে?
খেলাটা খুবই সহজ। আর্ট পেপার, ইনডেক্স কার্ড বা ভিজিটিং কার্ডটা চিত্রের মতো তিনকোণা করে কাচি দিয়ে কেটে নাও। এবার আঙুলের সাহায্যে চাপ দিয়ে কার্ডটাকে নৌকার মতো ভেতরের দিকে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে বাঁকা করো। এবার একটা টুথপিক নিয়ে তিন কোণা কাগজটার সঙ্গে টেইপ দিয়ে লাগাও। অথবা সামনে পিছে জাহাজের মতো করে নকশা এঁকে এক টুকরো শক্ত প্লাস্টিকের পাত কাটো। এ খেলার জন্য প্লাস্টিকের পাত হিসেবে বাসায় পরিত্যক্ত খালি পানির বোতল ব্যবহার করতে পারো। বোতলটা ডিটারজেন্ট বা সাবান পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবে।
এরপর মসৃণভাবে বোতলটা সমান করে চিত্রের মতো কাটো ও জাহাজের মতো আকার দাও। একদিকে হবে তীরের ফলার মতো চোখা। অন্যদিকে হবে ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে টুথপিকের অর্ধেকাংশ যেনো তিনকোণা কাগজ কিংবা প্লাস্টিকের বোতল থেকে কিছুটা বাইরে বের হয়ে থাকে। জাদুর জাহাজ টাইটানিক বা প্লাস্টিকের এ পাতটা পরিষ্কার পানিভর্তি বেসিন বা গামলার পানির মধ্যে আলতো করে ছেড়ে দাও।
পানি যেহেতু স্থির তাই এ জাহাজ আকৃতির প্লাস্টিকের পাতটা কোন নড়াচড়া করবে না। এমনিতেই ভেসে থাকবে পানির উপর। এবার পানি কোনরূপ নড়াচড়া না করে খুব সতর্কভাবে প্লাস্টিকের এ জাহাজের ঠিক পেছনের দিকে এক ফোঁটা তরল ডিটারজেন্ট ফেলো অথবা এই টুথপিকের শেষ প্রান্তে এক টুকরো সাবান গেঁথে দাও। ব্যস।
কি দেখবে?
এবার দেখবে সাবান ও টুথপিকসহ কী চমৎকার তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তোমার হাতে বানানো জাদুর জাহাজ টাইটানিক। সত্যিই অসাধারণ। প্লাস্টিকের টুকরোর জাহাজটা সত্যি সত্যি আপন মনে জাহাজের মতোই পানির উপর দিয়ে দ্রুতবেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারি মজা তাই না? তোমার ঘরের অন্য মানুষদের ডেকে এনে ব্যাপারটা দেখাও এবং তাদের সঙ্গে ঘরে বসে জাদুর জাহাজ টাইটানিক খেলা খেলো। কিংবা নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা করতে পারো। কানে কানে এবার জানিয়ে দিচ্ছি, পানিতে কোনো তৈলাক্ত পদার্থ থাকলে জাদুর জাহাজ টাইটানিক কিন্তু ঠিকমতো চলবে না। তুমি ইচ্ছে করলে তরল ডিটারজেন্টের বদলে মেথিলেটেড স্পিরিট দিয়েও এ খেলা খেলতে বা দেখাতে পারো।
আর হ্যাঁ, জাদুর জাহাজ টাইটানিক চলাচলে যদি কোন রকম বাধার সৃষ্টি হয় তাহলে গামলার পানি বদলে ফেলো। তারপর জাহাজের পেছনে ঠিক আগের মতোই ফোঁটা ফোঁটা তরল ডিটারজেন্ট ফেললেই জাদুর জাহাজ টাইটানিক আবার সামনের দিকে দ্রুতবেগে ছুটতে শুরু করবে।
কেমন করে এমন হয়?
তরল পদার্থের উপরিভাগে পাতলা অদৃশ্য একটা আবরণ থাকে। শুকনো গ্লাসের কানায় কানায় যদি পানি ঢালো তাহলে পানি উপচিয়ে পড়বে, যা এতক্ষণ সেই পাতলা আচ্ছাদন দ্বারা আবৃত ছিল। তোমার তৈরি প্লাস্টিকের জাদুর জাহাজ টাইটানিকটা সেই আবরণের উপর ভাসে। তোমার হাতে বানানো টাইটানিকের পেছনে লাগানো তরল সাবান বা সাবানের টুকরো বা ডিটারজেন্টের মতো তরল পদার্থ সেই আবরণকে দুর্বল করে দেয়। পানির সংস্পর্শে এসে ডিটারজেন্ট বা সাবানের দ্রবণ পানির উপরিতলের ঘনত্ব ভেঙে দেয়ায় জাহাজটাকে সামনের দিকে ছুটে চলতে বাধ্য করে।এমন করেই তোমার হাতে বানানো জাদুর জাহাজ টাইটানিক চলতে পারছে। সাবানের দ্রবণের কারণে পানি আরও পাতলা হয়ে যায়। পদার্থবিদ্যার মতে ‘সকল ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’। এখানে এই সাবানের অণুগুলো ধাক্কা দিয়ে হাতে বানানো জাদুর জাহাজ টাইটানিককে পানির সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আসলে জাদুর জাহাজ টাইটানিক এগিয়ে যাচ্ছে এইমাত্র গলে যাওয় সাবানের বিপরীত দিকে। সামনের বেশি পৃষ্ঠটানে জাহাজটা এগিয়ে গেলেও একসময় পুরো গামলার পানির উপরের স্তরে যখন সাবানের খুব পাতলা আস্তর পরে যায় তখন জাদুর জাহাজ টাইটানিক আর চলে না। আপন মনে থেমে যায়।
এবার খেলাটার মূল সূত্র নিয়ে নিজে চেষ্টা করে নতুন অন্য কোন খেলা বানানো যায় কিনা চেষ্টা করে দেখতে পারো। কারণ বিজ্ঞানকে বুঝতে হলে, বিজ্ঞানের স্বাদ পেতে হলে, বিজ্ঞান থেকে আনন্দ পেতে হলে নিজ হাতে কিছু কাজ করে দেখতে হয়।
লেখক পরিচিতি: শিশুদের মাঝে বিজ্ঞানকে সহজ ও জনপ্রিয়করণের কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুসাহিত্য ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। শিশু অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কারজয়ী এ লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪।