করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছিল।
বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে।
আর নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি করে দেশ যে আয় করেছে, তা গত অর্থ বছরের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি।
তবে সঙ্কট এখনই কেটে যাচ্ছে বলে মনে করছেন না রপ্তানিকারকরা। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারী থেকে অর্থনীতি উদ্ধারে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি (৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।
এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৪৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এর মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এর পর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল।
কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করে গত মার্চ মাস থেকে, এপ্রিলে রপ্তানি কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিটেন্সের চেয়েও কম।
এপ্রিল মাসে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়; তবে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি আয় বেড়ে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে উঠলেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের যে কোনো মাসের চেয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ।
মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগের মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ; যদিও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসে আয় হয়েছিল ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
জানুয়ারিতে আয় হয় ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি কম ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
তার আগের মাস ডিসেম্বরে ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
নভেম্বর, অক্টোবর এবং সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয় যথাক্রমে ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ, ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ এবং ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য।
ওই তিন মাসেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১৯ দশমিক ১৯ এবং ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মহামারীর মধ্যেও রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তিনি বলেন, “এখানে একটি বিষয় কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু আমাদের রপ্তানি আয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল। প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছিল।
“মহামারী না আসলেও কিন্তু গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানিতে ৮/৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম হত। কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় সেটা ১৭ শতাংশ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জীবন-জীবিকা একসঙ্গে চালানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতিই সচল হচ্ছে। আমাদেরও সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।”