সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফোনালাপের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শনিবার র্যাব সদর দফতরে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ একথা বলেন।
পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর গুলি ছোড়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে ফোন করেন। এ সময় এসপি মাসুদ হোসেন গুলিবর্ষণকারী পরিদর্শক লিয়াকতকে মিথ্যা বক্তব্য শিখিয়ে দেন। ওসি প্রদীপ কুমার এসপিকে জানান তার নির্দেশ পেয়েই লিয়াকত আলী সিনহাকে গুলি করেন। – বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন ফোনালাপ প্রকাশিত হয়েছে।
ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে (এসপি) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা— সংবাদাকিদের এমন প্রশ্নের জবাবে লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট যে ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা র্যাবের নজরে এসেছে। এই ফোনালাপের বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলো বিস্তরভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল এবং এই হত্যাকাণ্ডে কোন কোন ব্যক্তি নির্দিষ্টভাবে দায়ী— তাদের চিহ্নিত করাই র্যাবের মূল লক্ষ্য।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহতের বড় বোন যে মামলাটি করেছেন, ওই মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকি দুই জনের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, বাহারছড়া কেন্দ্রে এই দুটি নামে কোন পুলিশ সদস্য নেই। এরপরও এই দুই জনের বিষয়ে র্যাবের তদন্ত চলছে।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথের নামে দুটি মামলা দায়ের করেছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ। এই দুটি মামলার ক্ষেত্রে পৃথকভাবে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সিনহার বড় বোন যে মামলাটি দায়ের করেছেন, ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী হলো সিফাত। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ যে মামলাটি দায়ের করেছে, সেই মামলায় সিফাত একজন অপরাধী। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে আছেন। এই বিষয়টি নিয়ে র্যাব পর্যালোচনা করছে। এ বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য হচ্ছে— যেহেতু পৃথক দুটি মামলা হয়েছে, পুলিশের করা মামলার ক্ষেত্রে যে আইনজীবী আছেন তিনি সিফাত ও শিপ্রাকে মুক্ত বা জামিনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। এর বাইরে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা সিফাত ও শিপ্রার খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, ঘড়ি উদ্ধারের বিষয়ে প্রয়াজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি মামলা। এই মামলার তদন্তে র্যাব সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এর পাশাপাশি যে বিষয়গুলো গণমাধ্যমে এসেছে, সকল বিষয় সমন্বিত করে তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করবেন। তদন্ত কর্মকর্তা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন মনে করেন, তবে বাহিনীর যে কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। এখানে আইনি কোনা বাধ্যবাধকাতা নেই।
হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্ট আসামিকে এখনও র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে আশিক বিল্লাহ বলেন, আগামীকাল (রোববার) তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।