ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া হিসেবে পর্যায়ক্রমে সব রুটের যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আরো ১৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এছাড়া ট্রেনে ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের শর্ত বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি এক আইডি কার্ডে পরিবারের সর্বোচ্চ চার জন সদস্যের টিকিট কেনা ও ট্রেন ভ্রমণ করা যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরিফুল আলম। প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামূলক করে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিড়ম্বনার পর গতকাল রেলপথ মন্ত্রণালয় ঐ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
বর্তমানে মোট ৩০ জোড়া অর্থাত্ ৬০টি ট্রেন চলাচল করছে বিভিন্ন রুটে। নতুন এই ১৮ জোড়া ট্রেন রেলের বহরে যুক্ত হলে সব মিলিয়ে চলাচল করা ট্রেনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৮ জোড়া অর্থাত্ ৯৬টি। ২৭ আগস্ট চালু হতে যাওয়া ১৮ জোড়া ট্রেনগুলো হলো—চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটে এগার সিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেস, ঢাকা-তারাকান্দি-ঢাকা রুটে যমুনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটে এগার সিন্দুর গোধুলী এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চট্টলা এক্সপ্রেস, সান্তাহার-বুড়িমারী-সান্তাহার রুটে করতোয়া এক্সপ্রেস, রাজশাহী-চিলাহাটি-রাজশাহী রুটে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, খুলনা-রাজশাহী-খুলনা রুটে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, সান্তাহার-দিনাজপুর-সান্তাহার রুটে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, ঢালারচর-রাজশাহী-ঢালারচর রুটে ঢালারচর এক্সপ্রেস।
এছাড়া, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ঢাকা চট্টগ্রাম মেইল, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা রুটে দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, ঢাকা-ঝাঝিরা-ঢাকা রুটে বলাকা কমিউটার, সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে বগুড়া কমিউটার, খুলনা-পার্বতীপুর-খুলনা রুটে রকেট এক্সপ্রেস, পার্বতীপুর-চিলাহাটি-পার্বতীপুর রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস।
এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট আগের মতো একসঙ্গে অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। বিক্রিত টিকিট রিফান্ড করা যাবে না বা ফেরত নেওয়া হবে না। যাত্রার দিনসহ পাঁচ দিন পূর্বে আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের আগাম টিকিট ইস্যু করা যাবে।
যাত্রীদের সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোচের ধারণক্ষমতার শতকরা ৫০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে। আন্তঃনগর ট্রেন সব প্রকার স্ট্যান্ডিং টিকিট বন্ধ থাকবে।
ঢাকা-বিমানবন্দর-জয়দেবপুর-নরসিংদী স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের এবং ভৈরব বাজার স্টেশনে শুধু কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঐ সব স্টেশনের সংশ্লিষ্ট ট্রেনের কোটার টিকিট ঢাকা স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিক্রয় করতে হবে।
রাত্রিকালীন উচ্চশ্রেণির যাত্রীদের জন্য ট্রেনের ভেতর কোনোরকম চাদর-কম্বল এবং বালিশ সরবরাহ করা হবে না এই লক্ষ্যে বিদ্যমান বেডিং চার্জ টিকিটের মূল্য হতে বাদ দেওয়া হবে। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার লক্ষ্যে ট্রেনে খাবার সরবরাহ বন্ধ থাকবে। উল্লেখ্য, স্বাভাবিক সময়ে সারা দেশে প্রায় ১০০টির মতো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এই মাসের মধ্যে বন্ধ থাকা বাকি ট্রেনগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কিছু মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে গত ৩১ মে প্রথম দফায় আটটি রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। গত ৩ জুন দ্বিতীয় দফায় আরো ১১টি রুটে আন্তঃনগর ট্রেন বাড়ানো হয়।