সংবাদপত্র শিল্প রক্ষার দাবিতে শনিবার (২২ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে নোয়াবের যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, নোয়াবের এই বিবৃতি সংবাদপত্র শিল্পে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির সুগভীর চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ।
বলা হয়, বিবৃতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যেসব বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও সত্যের অপলাপ মাত্র। বরং দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে প্রতীয়মান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আগস্ট বাংলাদেশে একটি চক্রান্তের মাস। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এ মাসেই চক্রান্তকারীরা বেশি তৎপর হয়। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছে নোয়াবের বিবৃতিতে তার গন্ধ পাওয়া যায়। নোয়াব সংবাদপত্র শিল্প রক্ষার জন্য সরকারে কাছে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছে। এ সব দাবির যৌক্তিকতা বুঝাতে গিয়ে তারা বলেছে, ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ অযৌক্তিক। শুধু নবম ওয়েজ বোর্ড নয়, এ পর্যন্ত যত ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ হয়েছে, তার সবই অবান্তর ও অযৌক্তিক।’
বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু আজ শনিবার (২২ আগস্ট) এক যুক্ত বিবৃতিতে নোয়াবের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নোয়াব প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকেই সংবাদপত্রের সাংবাদিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ কার্যকর রয়েছে। নোয়াব পরিবারের একাধিক সদস্য এক সময় এই ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ এর আওতায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আজকে তাদের অনেকেই নোয়াব এর সদস্য।’
নেতৃবৃন্দ ধিক্কার জানিয়ে বলেন, ‘কোন মানুষেরই এত দ্রুত তার অতীত ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। নোয়াবের মনে রাখা দরকার ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ রাষ্ট্রের আইন। সংবাদপত্রকেও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হয়। রাষ্ট্রের আইন মানতে না চাইলে তার পরিণতির কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। নোয়াবের জন্মের পর থেকেই মূলত ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা শুরু হয়। তারা নানা কৌশলে নিয়োগপত্রবিহীন সাংবাদিক, কম বেতন, থোক বেতন ও সংবাদকর্মীদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের প্রয়াস শুরু করে। নোয়াব কোনকালেই কোন ওয়েজবোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু সরকারের প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিয়েছে।’
বিএফইউজে ও ডিইউজে বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘সরকার মনে করলে নোয়াবকে সরকারি খাজনা উজাড় করে দিতে পারে। কিন্তু এই দেওয়া নেওয়ার সাথে সাংবাদিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকারের কোন সম্পর্ক নেই। সংবাদপত্র শিল্পের মালিককে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সাংবাদিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কেউ যদি মনে করেন, প্রচলিত আইন মেনে তার পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, তবে তিনি প্রচলিত আইনে অনুসরণ করতে পারেন। কিন্তু কোন ধরনের বাহানা দেখিয়ে বেতন না দিয়ে, বেতন কমিয়ে, ছাঁটাই করে সংবাদ কর্মীদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। স্বেচ্ছাচারী হয়ে মর্জি মাফিক প্রতিষ্ঠান চালানোর কোন সুযোগ নেই। বিএফইউজে ও ডিইউজে প্রয়োজনে ফেডারেশনের সকল সদস্য সংগঠনসহ সারাদেশের সংবাদ কর্মীদের নিয়ে এ ধরনের সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘নোয়াবই দেশের গণমাধ্যমের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নয়। সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশকদের আরও সংগঠন আছে। নোয়াব পবিরারের সদস্যরাই শুধু গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করে না। নোয়াব হচ্ছে দু’একজন লোকের কুক্ষিগত একটি প্ল্যাটফর্ম। বেশিরভাগ সংবাদপত্রের সাথে নোয়াবের সম্পর্ক নেই। কোন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রকাশকের কোন সমস্যা হলে নোয়াব একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেয় না। শুধু নিজেদের স্বার্থের ধান্ধা নিয়ে চলে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘নোয়াব করোনার অজুহাত দেখিয়ে সংবাদপত্র শিল্পের সংকটের কথা বলছে। উদাহরণ হিসেবে তারা চট্টগ্রামের কথা বলেছে। নোয়াব চট্টগ্রাম থেকেই গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল। কিছুদিন আগে তারা বিবৃতিও দিয়েছিল। কিন্তু ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সময়োচিত হস্তক্ষেপে নোয়াবের মিশন ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে করোনা এসেছে এ বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু তার আগে বহু বছর ধরে সংবাদপত্রের মালিকরা নিরঙ্কুশভাবে সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ মোতাবেক বেতন-ভাতা দেয়নি। বরাবরই নানা ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে সংবাদ কর্মীদের ঠকানো হয়েছে। এখন তারা করোনার অজুহাতে ঢালাওভাবে ছাঁটাই, বেতন কমানো এবং বেতন-ভাতা না দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। যা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সামিল।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘নোয়াবের এসব দাবি গণমাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির কোন অপকৌশল কিনা, দেশের সার্বিক স্থিতাবস্থা বিনষ্ট করার কোন চক্রান্তের অংশ কিনা সরকারকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, তাদের দাবিগুলোর সারাংশে সরকারকে জিম্মি করে স্বার্থ হাসিল করার পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের আইন সংগত ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার প্রসঙ্গ রয়েছে।’
নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিৎ সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক ও পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান করে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া। যারা বর্তমান সময় পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে সক্ষম তারা চালাবেন। যারা পারবেন না তারা প্রচলিত আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবেন। এখানে জোর জুলুম করার কিছু নেই। তবে মনে রাখতে হবে, সাংবাদিক, শ্রমিক ও কর্মচারীরা ঘোলা জলে কাউকে মাছ শিকার করতে দেবে না।নোয়াব বলেছে, দেশের অর্থনীতি নাকি স্থবির হয়ে গেছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে এত আবদার কেন? এত লোকশান দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে তাদের কে বলেছে? সংবাদপত্রের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীদের চাকরীচ্যুত করে আবার ‘অনলাইন’ চালু রাখা হচ্ছে কিসের ধান্ধায়। এগুলো করার সময়তো সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি? অনলাইনে কর্মরত সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ন্যায্য পাওনা প্রদানের ক্ষেত্রেও বেতন কাঠামোর কোন নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না।