নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় ঢাকার দুটি আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।
এর মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে তিনি নিজে প্রার্থী হবেন, আর ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থী করবেন তার সংগঠনের অন্য একজনকে।
রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশন কয়েকটি ফাঁকা আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পর নূর তার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগে দুই সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ (উত্তরা) এবং হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫ (ডেমরা) আসন শূন্য হয়েছে।
আগামী ৬ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি, তারপরে হবে ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন।
নূর বলেন, “আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি।
“সামনে যেহেতু ঢাকার দুটি সংসদীয় উপনির্বাচন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের অবস্থানটাকে আরও ক্লিয়ার করতে চাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে চাই। ঢাকা-৫ আসনেও আমরা তরুণ প্রার্থী দেব।”
দল হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হবে। সেজন্য কিছূ শর্তও পূরণ করতে হয়। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে এক সময়ে যুক্ত থাকা নূর কয়েক বছর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে সারাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ওই আন্দোলনে মামলা-হামলার মুখে গত বছর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
ওই আন্দোলনে জড়ানোর পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের কড়া সমালোচকের ভূমিকায় দেখা গেছে নূরকে। সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে নানা আলোচনা অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গিয়েছিল।
এখন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজে নেমে পড়া নূর বলেন, এরই মধ্যে দলের সহযোগী শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে পেশাজীবী পরিষদ গঠনের কাজ।
চলতি বছরের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আশা প্রকাশ করছেন নূর ও তার সহযোগীরা। ঢাকায় দুটি আসনের উপনির্বাচনের পরই নতুন দলের নাম ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
নূর বলেন, জনগণের ‘ভোটের অধিকার’ ফিরিয়ে আনতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান তারা।
“উৎসব আমাজের ভোটকে ক্ষমতাসীন দল ভোট ডাকাতি ও ভোট কেন্দ্রে জনগণকে যেতে না দিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে। ভোটের অধিকার চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে একটা ভোটকেন্দ্র বিমুখতা তৈরি হয়েছে। আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই।”
আপাতত শুধু ঢাকার দুটি আসনেই প্রার্থী দিতে চান নূররা। অন্য উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
ঢাকা-১৮ আসন বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নূর বলেন, “ঢাকা-১৮ আসনে (উত্তরা) আমি একসময় থেকেছি। আমি উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছিলাম।
“সেই সূত্রে সেখানে আমার পরিচিত অনেক লোক আছেন। নির্বাচনে অংশ নিলে তরুণ নেতা হিসেবে অনেকে আমাকে সমর্থন করার আশ্বাস দিয়েছেন।”
তবে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জানান নূর।
তিনি বলেন, “যেহেতু ঢাকা-৫ আসনে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা শিগরিরই বসে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের সংগঠন (ছাত্র অধিকার পরিষদ) ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী নুর ডাকসুর নির্ধারিত মেয়াদ শেষে গত ২৩ মার্চ থেকে ভিপি পদে আর না থাকলেও ছাত্রত্ব থাকা পর্যন্ত ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য থাকছেন।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সন্তান নুর ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার শ্বশুর হাতেম মাস্টার গলাচিপার চরবিশ্বাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা। নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তাদের এক মেয়ে রয়েছে।