বিএনপির আয়ে ধস

bnp-office-paltan

টানা তিন বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) তহবিলে কয়েক কোটি টাকার উদ্বৃত্ত থাকলেও গত বছর আয়ে ধস নেমেছে, ব্যয় হয়েছে তার তিন গুণের বেশি।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে ২০১৯ সালে আয়-ব্যয়ের যে বার্ষিক বিবরণী জমা দিয়েছে দলটি, তাতে গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আয় দেখানো হয়েছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। অপরদিকে এই সময়ে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই হিসাব বিবরণী নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের কাছে জমা দেন। এ সময় দলের সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম ও হিসাব রক্ষক ওমর ফারুক তার সঙ্গে ছিলেন।

হিসাব বিবরণীতে দলীয় সদস্যের চাঁদা, মনোনয়নপত্র বিক্রি ও অনুদান থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর দলের কার্যালয়ে কর্মরত স্টাফদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, পোস্টার ছাপানো, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি বাবদ মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা।

আয়ের তিন গুণের বেশি ব্যয়ের ওই অর্থ কোথা থেকে মেটানো হয়েছে, সে বিষয়ে হিসাব বিবরণী বলা হয়েছে, দলের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত অর্থ থেকে এই ব্যয় মেটানো হয়েছে।

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছরে বিএনপি আয় কয়েক গুণ বেড়ে প্রায় ১০ কোটিতে পৌঁছায়। নির্বাচন কমিশনে তাদের দেওয়া হিসাব বিবরণীর তথ্য মতে, ওই বছর ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা। বছর শেষে দলীয় তহবিলে মোট উদ্বৃত্ত ছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা।

ভোটের বছরে বিএনপির আয় ১০ কোটি টাকা

২০১৭ সালে বিএনপির মোট আয় ছিল ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা; মোট ব্যয় হয় ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে ছিল।

তার আগের বছর দলটির আয় হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা।

তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির আগের তিন পঞ্জিকা বছরে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি ছিল।

২০১৫ সালের দাখিল করা আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএনপি ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা ঘাটতিতে ছিল। ২০১৪ সালে আয়ের চেয়ে ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৬ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে দলটির।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগের বছরে ২০১৩ সালে (পঞ্জিকা বছর) দলটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা আয়ের বিপরীতে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা ব্যয় দেখিয়েছিল। সে সময় ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দি হলেও ওই বছর শেষ দিনে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। ওই নির্বাচনে ভরাডুবির পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি নির্বাচন বাতিল বা তাদের নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন- কোনোটিই সেভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। আর এই বছরই তাদের দলীয় আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। এবার ৩১ জুলাই ঈদের ছুটি ছিল। তাই আইন অনুযায়ী, ঈদের ছুটি শেষে গত ৩ অগাস্ট প্রথম সরকারি কর্মদিবস ছিল হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময়। পরে হিসাব জমা দেওয়ার সময় আগামী ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পর পর তিন বছর দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪১টি।

Pin It