ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জি আর নেই। সোমবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সন্ধ্যায় প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি টুইটে জানিয়েছেন, খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার বাবা প্রণব মুখার্জি মারা গেছেন। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ভারতজুড়ে মানুষের কাছ থেকে প্রার্থনা পেয়েছি। এরপরও বাবাকে ফেরাতে পারিনি। আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই পাশে থাকার জন্য।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে সোমবার দিল্লির সেনা হাসপাতাল তার শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানিয়েছিল। অবশ্য শনিবার (২৯ আগস্ট) হাসপাতাল জানিয়েছিল, প্রণব মুখার্জির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। তবে এখনও গভীর কোমায় আচ্ছন্ন। তার ফুসফুস সংক্রমণের চিকিৎসা চলছে।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা। গত ৯ আগস্ট পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এরপর স্নায়ুঘটিত সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত ১০ আগস্ট তাকে আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিনই অপারেশন হয় তার মাথায়। এছাড়া এর আগে থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ২০১২ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখার্জি কয়েকবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি একাধিক সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আনুগত্য ও অসামান্য প্রজ্ঞাবান এই বাঙালি ভারতের সর্বক্ষেত্রে শ্রদ্ধার পাত্র। গতবছরের আগস্টে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে কেবল রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, গোটা ভারতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জননন্দিত এই রাজনীতিকের প্রয়াণ ভারতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে শোক প্রকাশ করছেন বিভিন্ন মহলের রাজনীতিবিদ। এমন নির্ভেজাল ও দেশপ্রেমিক একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়ে বেদনাহত তারা।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরেণ্য রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক
এছাড়াও আরও শোক জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রিয়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জামালপুরে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ।
শোকবার্তায় তারা প্রয়াত প্রণব মুখার্জির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শোকাবার্তায় মন্ত্রীরা বলেন, প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দলের প্রতি আনুগত্য ও অসামান্য প্রজ্ঞাই এই বাঙালি রাজনীতিবিদকে ভারতীয় কংগ্রেস দলে ও এমনকি দলের বাইরেও বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র করেছেন। দেশের প্রতি অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ভারতের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন ও পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
শোকবার্তায় মন্ত্রীরা আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখার্জির অসামান্য অবদান বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণে রাখবেন।
প্রতিমন্ত্রীরা শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও দৃঢ়ীকরণে তিনি রেখেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে উপমহাদেশের এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অধ্যায়ের ইতি ঘটলো এবং বাংলাদেশ হারালো এক অকৃত্রিম বন্ধু। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যু শুধু ভারত নয় বরং উপমহাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
এক শোকবার্তায় স্পিকার বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।
প্রণব মুখার্জি ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক প্রণব মুখার্জি এ দিন নয়াদিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪।
প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক বুধবার
তিনি বলেন, সরকার ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বুধবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বুধবার দেশের সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অধনমিত রাখা হবে।
ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সোমবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
২০১২ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখার্জি কয়েকবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি একাধিক সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আনুগত্য ও অসামান্য প্রজ্ঞাবান এই বাঙালি ভারতের সর্বক্ষেত্রে শ্রদ্ধার পাত্র। গতবছরের আগস্টে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৩১ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান ও স্মৃতিকাতর হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখার্জির অনন্য অবদান কখনও বিস্মৃত হবার নয়। আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যেকোনো সংকটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।