আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘আধিপত্যবাদীদের পুতুল’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি দিবসে বুধবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় একথা বললেও সেই ‘আধিপত্যবাদী’ কারা, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
আলোচনায় ওঠা বক্তব্যের সূত্র ধরে ফখরুল বলেন, “কিছুক্ষণ আগে একজন বিজ্ঞ আলোচক বলেছেন যে পুতুল সরকার।
“এটা (আওয়ামী লীগ সরকার) আধিপত্যবাদের পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু তাদেরই এজেন্ডা এখানে বাস্তবায়িত করছে।”
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও নেপথ্যে থাকা আরেক শক্তি সরকার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ডিপ স্টেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে সরকার বলা যায় না, এটাকে একটা আমরা শাসন বলতে পারি। ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে সেই ডিপ স্টেট অব্যাহত আছে এখনও, বরঞ্চ এটা আরও ডিপার হয়েছে।”
এই পরিস্থিতি বিএনপিকে আন্দোলনের নতুন পথ খোঁজার উপর জোর দেন তিনি।
“আমাদেরকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। ডিপ স্টেটের বিরুদ্ধে কিছু কাজ আছে, তাদের কাজগুলো সারফেইসে নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে আমাদের পুরোপুরি এক্সপোজ করতে হবে।”
জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়াকে বন্দি করার দিনটি স্মরণে বুধবারের এই আলোচনা সভা হয়, লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
খালেদা জিয়ার জনভিত্তির বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “তিনি তো ছিলেন হ্যামিলনের বংশীবাদক। লন্ডন খেকে আসলেন, রোহিঙ্গারা এসে গেছে তখন। আমরা তাকে বললাম আপনার একবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিজিট করা দরকার। তিনি রাজি হলেন। পথে পথে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাওয়ার সময়ে এবং ফেরার সময়েও।
“আমার বিশ্বাস এই মানুষগুলোকে সংগঠিত করে আমরা যদি রাজপথে নামতে পারি, তাহলে এই গণতন্ত্রবিরোধী সরকারক সরাতে পারব।”
আলোচনার প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার যেমনিভাবে গায়ের জোরে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় ছিল, আজকের সরকারও গায়ের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে।
“মানুষের অধিকার হরণ করছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করছে এবং দেশকে একটা অন্ধকার গহ্বরে ফেলে দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে। একই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজকে বিদেশে অবস্থান করছে।”
এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে দলকে সংগঠিত করে রাজপথে নামার উপর জোর দেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “দেশনেত্রীর রাজনীতির যে দিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বার বার প্রমাণিত হবে, সেটা হচ্ছে তার আপসহীন রাজনীতি। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়ে কোনোদিন আপস করেননি। সেজন্য তিনি কারাবরণ করতে পিছপা হননি।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “এখন যেটা আমাদের করতে হবে বেগম খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। উনার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি।
“আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একেবারে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কাজ করি, আমাদের নেত্রীর মুক্তির ব্যবস্থা করি, গণতন্ত্রের মুক্তির ব্যবস্থা করি।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আন্দোলনে নামার আগে বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দলের কথা বলছি না, আমি বলছি যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনও অনেক বেঈমান রয়ে গেছে, যারা শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে।
“আমাদের সেদিকেও একটু খেয়াল রাখতে হবে। কর্তৃত্ববাদী সরকারকে আন্দোলন ছাড়া সরানো যাবে না। তাই দলকে সুগঠিত করার প্রয়োজন রয়েছে।”
জরুরি অবস্থার সময় বিএনপি বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আমাদের দেশে ২/৩টা প্রখ্যাত পত্রিকা তারা একই সুরে কথা বলতে শুরু করল, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা লক্ষ্য করলাম যে, বেশ কয়েকটি দেশের ডিপ্লোমেটরা টুইজডে ক্লাব বলে একটি ক্লাব তৈরি করল। সেই ক্লাবে আবার একটা আন্দোলন শুরু হল যোগ্য প্রার্থীর..
“সবই একই সূত্রে গাঁথা ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি, তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন নাটক তৈরি করেছে। বিভিন্নভাবে আমাদের এখানে ১/১১‘র সেনা সমর্থিত সরকার তৈরি হয়েছে। তারপরে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে যে নির্বাচনটা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একবারের জন্যও মাথা নোয়াননি।”
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও বক্তব্য রাখেন।