ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে এশার নামাজ শেষে মোনাজাত চলাকালেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে একাধিক এসির। মুহূর্তেই মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে মসজিদে থাকা মুসল্লীদের গায়ে আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়লে একে একে দগ্ধ হতে থাকে মুসল্লীরা। মসজিদের ভেতর থেকে আসতে থাকে মুসল্লীদের আত্মচিৎকার।
পরে আশেপাশের লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। তাদের অনেকের শরীরের কাপড় ছিল না। আগুনে পুড়ে যায় শরীরের কাপড়গুলো। আহতদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনার পর তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ জানান, অগ্নিদগ্ধের মধ্যে ২০জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাদের শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে।পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদের সামনে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ৩৭ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় মসজিদের ভেতরে থাকা এসি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা ৬টি এসি একে একে বিস্ফোরণ ঘটলে মোনাজাতরত অর্ধশতাধিক জন মুসল্লীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে প্রায় কমবেশী সকল মুসল্লী দগ্ধ ও আহত হয়। এলাকাবাসী দ্রুত দগ্ধ ও আহতদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ কয়েকজনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়েদেন অন্যান্যদের ঢাকা প্রেরণ করেন।
সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আরো জানান, অগ্নিদগ্ধ ২০ জনের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন যে, তাদেরকে হাসপাতালে আনার সাথে সাথে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু জানান, ঘটনার পর দগ্ধ রোগীরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলেও একজন রোগীকেও ধরেননি ডাক্তাররা। তাদের হাসপাতালের ফ্লোরে বসিয়ে রাখা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় রোগীদের।
তিনি আরও জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পরেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ভেতরে একের পর এক লোকজন পড়ে আছে। ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা গরম তেল মুসল্লীদের শরীরে পড়ছে। এতে করে তাদের সকলেই দগ্ধ হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার নাজমুল হোসেন জানান, রাত ৯টা হতে একের পর এক রোগী আসতে থাকে। তাদের সকলের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যেসব রোগী এসেছে তাদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তাদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন এসেছিল। তাদের অধিকাংশের শরীরের ৯৯ভাগ দগ্ধ হয়ে গেছে। কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ঘটনাস্থল থেকে জানান, মসজিদের ভিতরের ৬টি এসি একে একে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটলে মুসল্লীরা অগ্নিদগ্ধ হলে এলাকাবাসী দ্রুত মুসল্লীদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর আশেপাশের শত শত লোক মসজিদের আশেপাশে ভিড় জমায়। সমগ্র এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। মসজিদের এসি ও বাইরে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর পুরো মসজিদের ভেতরে এক ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মসজিদের জানালার গ্লাসগুলোর সবগুলো ভাঙা ছিল। ভেতরে কয়েকটি চেয়ার ছিল ভাঙাচোরা। ফ্যানগুলোও বাকা হয়ে যায়। ভেতরে থাকা দেড় ও ২ টনের ৬টি এসির সবগুলো বিস্ফোরণ ঘটে ভেতরের যন্ত্রাংশ বেরিয়ে গেছে। মসজিদের ভেতরে ফ্লোরের কিছু স্থানে রক্তের পানি দেখা গেছে। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক নাদিমের অবস্থাও আশংকাজনক।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। খবর পেয়ে রাতেই জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন ও পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পশ্চিম তল্লা এলাকার অগ্নিদগ্ধদের স্বজনরা আহতদের সন্ধ্যানে হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে ভিড় করেছে। মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে মসজিদে জেনারেল কোম্পানীর ৬টি এসি ছিল। বিদ্যুৎ এর আপ ডাউনের ফলে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর একে একে মসজিদের এসিগুলি বিস্ফোরণ ঘটলে মসল্লীরা অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়।
মসজিদে এসি বিস্ফোরণের কারণ জানতে তদন্ত কমিটি
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ৩৭ জন জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন।
ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন জানান, ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায়, মসজিদের ভেতরে পরপর ছয়টি এসি একইসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। এসি বিস্ফোরণের কারণে মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসল্লিরা দগ্ধ হয়েছেন। কীভাবে একই সময় একই সঙ্গে ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হলো, এটা তদন্তের পর বলা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জিল্লুকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ওই মসজিদে কোনো গ্যাসের লাইন ছিল কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। কারণ, মসজিদের ভেতরে জমে থাকা পানি থেকে বুদবুদ শব্দ হচ্ছে। ঘটনাস্থলে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সব কিছুই দেখছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে ছয়টি এসি বিস্ফোরিত অবস্থায় আমরা পেয়েছি। এছাড়া রাতেই মসজিদটি সীলগালা করে দিয়েছে পুলিশ।